ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও দিব্য আবির্ভাব সম্পর্কে জানেন কী?

অনলাইন ডেস্ক

ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি-অতীতের এক অতুলনীয় ঐশ্বরিক মুহূর্ত। আজ থেকে প্রায় পাঁচ সহস্রাব্দ আগে মথুরার কংসশাসিত অন্ধকার কারাগারে দেবকী ও বসুদেবের কোলে আলোকোজ্জ্বল রূপে প্রকাশিত হয়েছিলেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

- Advertisement -

মানবসমাজের জন্য সেই দিবস হয়ে উঠেছে এক চিরস্মরণীয় উৎসব-শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী। এ বছর আমরা পালন করছি তার ৫২৫১তম আবির্ভাব তিথি, যা যুগ যুগ ধরে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে-ন্যায়, সত্য, প্রেম ও ভক্তির পথে ফিরে আসাই প্রকৃত শান্তির একমাত্র পথ।

- Advertisement -google news follower

ভগবান জন্ম-মৃত্যুর সীমা অতিক্রমকারী। তিনি নিত্যবিদ্যমান; যেমন, আকাশে সূর্য সবসময়ই থাকে-কখনো দৃশ্যমান, কখনো অদৃশ্য। তার প্রকাশকেই ‘জন্মলীলা’ বলা হয়।

শ্রীকৃষ্ণ কোনো মানবসন্তানের মতো সাধারণ জন্ম নেননি; তিনি ইচ্ছামাত্র প্রকাশিত হন।

- Advertisement -islamibank

গীতায় তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন-‘আমার জন্ম ও কর্ম দিব্য; যে ভক্ত তত্ত্বত তা জানে, সে মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে না, বরং আমার নিত্যধামে প্রবেশ করে।’ এ সত্য উপলব্ধি করতে পারলেই মানুষ জন্ম-মৃত্যুর শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায়।

শ্রীকৃষ্ণের অবতারের উদ্দেশ্য ছিল বহুমাত্রিক-দুষ্টের দমন, সৎজনের রক্ষা ও ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। গীতার বাণী অনুসারে, যখন ধর্ম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং অধর্ম প্রাবল্য লাভ করে, তখন তিনি অবতীর্ণ হন।

তার বাল্যলীলা, মাধুর্যলীলা, কিংবা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে প্রদত্ত উপদেশ-সবই যুগে যুগে মানবজাতির জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস।

মানবসমাজের প্রতি তার শ্রেষ্ঠ উপহার দুটি-শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত। গীতা কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি কর্তব্যপালন, ঈশ্বরনির্ভরতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির সর্বজনীন জীবনদর্শন।

ভাগবত ভক্তির শাশ্বত দর্শন, যেখানে ঈশ্বরের অপরিসীম লীলা ও প্রেমভক্তির মহিমা অপূর্বভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে।

জন্মাষ্টমী কেবল একটি তিথি নয়-এটি আত্মশুদ্ধি ও ঈশ্বর স্মরণের মহোৎসব। উপবাস, কীর্তন, শাস্ত্রপাঠ, মধ্যরাত্রির মহাআরতি-এসব আচার ভক্তের অন্তরকে শুদ্ধ করে ও জীবনের কেন্দ্রে ঈশ্বরকে স্থাপন করে।

আমাদের দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই দিনে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মানবিকতা জাগ্রত করছে।

আজ জন্মাষ্টমী বিশ্বজুড়ে পালিত হয়-নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, মস্কো থেকে আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে শ্রীল এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ আমেরিকার পথে জলদূত নামক জাহাজে জন্মাষ্টমী উদযাপন করেছিলেন।

সেই মহাসাগরবক্ষে অনুষ্ঠিত জন্মাষ্টমী পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিকভাবে কৃষ্ণভক্তি প্রচারের যেন ভিত্তিস্থাপন করে।

আজকের বিশ্বে, যেখানে ভৌত উন্নতি সত্ত্বেও নৈতিক অবক্ষয়, হিংসা ও বিভেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন-সত্য, করুণা, অহিংসা ও সর্বজনহিত ব্যতীত শান্তি সম্ভব নয়।

গীতার আহ্বান আমাদের স্মরণ করায়-আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান; জাতি, ধর্ম ও ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে সবার কল্যাণ কামনা করা মানুষের প্রকৃত কর্তব্য।

তাই জন্মাষ্টমী কেবল অতীতের স্মরণ নয়, এটি এক জীবন্ত আধ্যাত্মিক আহ্বান। আসুন এ পবিত্র তিথিতে শপথ নিই-আমরা অন্তরে ভক্তি ও নৈতিকতার আলো প্রজ্বলিত করব, সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠা করব এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেমবার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেব। তবেই তার আবির্ভাব তিথি আমাদের জীবনে সত্যিকার অর্থে ফলপ্রসূ হবে।

দেশের সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এবং সেই সঙ্গে ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি জন্মাষ্টমীর আন্তরিক শুভেচ্ছা-ভগবান শ্রীকৃষ্ণের করুণাধারায় আমাদের সবার জীবন হোক শান্তি, প্রেম ও আনন্দে পূর্ণ।

চারু চন্দ্র দাস : সাধারণ সম্পাদক, ইসকন বাংলাদেশ

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ