অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে প্রকল্প ব্যয় বেশি বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, বড় সমস্যা হলো আমাদের প্রকল্পের ব্যয় বেশি। আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় অন্য দেশের তুলনায় বেশি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বিলম্ব হয়। বিলম্ব হলেই ব্যয় বাড়ে। আরও ব্যয় সাশ্রয়ী হতে হবে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সরবরাহ উদ্বোধন করে উপদেষ্টা বলেন, পাইপলাইনে ডিজেল সরবরাহের মাধ্যমে অপচয় কমবে। চুরিও ঠেকানো যাবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। যদিও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। এখন প্রকল্পটি ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, আমাদের শুধু ব্যয় বেশি এমনটা নয়, বিলম্বেও কাজ শেষ হয়। কোনো কোনো প্রকল্প ১৭-১৮ বছর ধরেও চলেছে। এসব প্রকল্প আমরা আর টানতে পারব না।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব একটা নেই। কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল। সেটাও ফুরিয়ে আসছে। এমনকি দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে আমরা সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, ব্যয়ও বাড়ে। এসব থামাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রকল্পগুলোয় নিজস্ব ভ্যালু যুক্ত করতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে নেগোসিয়েশন (দর–কষাকষি) হলো। সেখানেও ভ্যালু যুক্ত করা নিয়ে কথা হয়েছে। সামনের দিনে ভ্যালু বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। আমাদের অসংখ্য প্রকৌশলী বেকার। এমনকি বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলীকেও বেকার থাকতে হচ্ছে। অন্য দেশের ঠিকাদারের ওপর আমরা অতি নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।’
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রধান মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সুলতান মাহমুদ খান।
বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা
বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৮ লাখ টন। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশই ডিজেল। এই পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন বা ৩১৭ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।
ঢাকা বিভাগে জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোয় নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ ব্যবহৃত হয়।
প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল ও জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। তাতে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। ১৬ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ উঠে আসবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে নদী ও সড়কপথে ডিজেল পরিবহনে বছরে খরচ হচ্ছে বছরে ৩২৬ কোটি টাকা। পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন শুরু হলে এই খরচ আর লাগবে না। তবে পাইপলাইনটির রক্ষণাবেক্ষণে বছরে খরচ হবে ৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা।
নথিপত্র অনুযায়ী, পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশটি গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত। পাইপলাইন ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বুস্টার পাম্প ও ৯টি জেনারেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।
জেএন/এমআর