ধনী-কোটিপতিরা সব পাড়ি জমাচ্ছেন দুবাই,কিন্তু কেন?

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ধনী ব্যক্তিরা এখন তাদের পরিবার, ব্যবসা ও ব্যক্তিগত অফিস নিয়ে দুবাইয়ে পাড়ি জামাচ্ছেন। এটি একটি নতুন প্রবণতা।

- Advertisement -

করমুক্ত আয় নীতিমালা এবং সহজ বিলাসবহুল জীবনযাত্রা—এই দুই কারণেই তারা মরুর এই শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

- Advertisement -google news follower

দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের দেশগুলোর ধনী ব্যক্তিদের স্বাগত জানিয়ে আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহরগুলো, বিশেষ করে দুবাই।

তবে এখন পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধনী ব্যক্তি সেখানে যাচ্ছেন বলে ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে দুবাই পাড়িজমানো কিছু মানুষ।

- Advertisement -islamibank

হেনলি ও প্যাটনার্স নামের একটি পরামর্শক সংস্থা ধারণা করছে, এ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯ হাজার ৮০০ জন নতুন কোটিপতি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবেন, যা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।

দুবাই খুব কড়া নিয়ন্ত্রিত হলেও এটি ধনীদের জন্য এক ধরনের চুম্বক হয়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খুব কম অপরাধের হার, সহজ ব্যবসা পরিচালনা ব্যবস্থা এবং এখানে সহজেই বিলাসিতার নাগাল পাওয়া যায়।

এই অঞ্চলের “গোল্ডেন ভিসা” কর্মসূচি ধনী বা দক্ষ বিদেশিদের ১০ বছরের আবাসিক অনুমতি দিয়ে থাকে।

স্কাইবাউন্ড ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান মাইক কোডি বলেন, ‘আমার কিছু ক্রেতা মনে করেন, তাদের নিজ দেশে সফলতাই যেন এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাদের ওপর বেশি ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে, বেশি নজরদারি চলছে, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা কমে গেছে। অথচ দুবাইয়ে সম্পদ লুকাতে হয় না, বরং সেটি স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণযোগ্য।’

তিনি বলেন, ‘লন্ডনে আমার ক্লায়েন্টরা তাদের সম্পদের তথ্য গোপনে জানাতেন। কিন্তু দুবাইয়ে তারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।’

সৌন্দর্য ও বিলাসিতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দুবাই এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এখানেই রয়েছে বিশাল শপিং মল, যেখানে ইনডোর স্কি করার ব্যবস্থা রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা এবং পাঁচতারকা হোটেলসমৃদ্ধ কৃত্রিম দ্বীপ পাম আইল্যান্ড রয়েছে।

তবে এত উন্নয়নের পেছনে রয়েছে বিপুল সংখ্যক কম পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিবাসী শ্রমিক, যা ধনী-গরিব বৈষম্য নিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

অল্প কাগজপত্রেই ব্যবসা সম্ভব
স্কাইবাউন্ড ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান মাইক কোডি বলেন, যারা দুবাইয়ে যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই ৩০-৪০ বছরের পেশাজীবী। যেমন: টেক উদ্যোক্তা, পারিবারিক ব্যবসার উত্তরসূরি, কনসালট্যান্ট বা ফান্ড ম্যানেজার।

এর মধ্যে রয়েছেন একজন ৪২ বছর বয়সী ক্লাউড সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, যিনি নিজের কোম্পানি বিক্রির পর যুক্তরাজ্যে মূলধন লাভ কর হিসেবে বিশাল অঙ্কের ট্যাক্স দেওয়ার ভয়ে দুবাইয়ে চলে এসেছেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোটিপতি ‘রফতানিকারক’ দেশ।

“নন-ডম” স্ট্যাটাসধারীদের ওপর কর নীতির কঠোরতা, উত্তরাধিকারের ওপর নতুন কর আরোপের পরিকল্পনা এবং ‘ধনীবিরোধী’ কথাবার্তা—এ সব কারণেই হেনলি অ্যান্ড প্যাটনার্স অনুমান করছে, এ বছর যুক্তরাজ্য ১৬ হাজার ৫০০ কোটিপতি হারাবে, যা একটি রেকর্ড।

এ বছর আলোচিত একজন চলে যাওয়া ধনী ব্যক্তি বিলিয়নিয়ার জন ফ্রেডরিকসন। তিনি নরওয়ের মিডিয়াকে বলেন, ‘ব্রিটেন শেষ হয়ে গেছে, তাই আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছি।’

ম্যাক্স ম্যাক্সওয়েল একন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সিরিয়াল উদ্যোক্তাে এবং প্যাডকো রিয়েল স্টেট (Paddco Real Estate)-এর সিইও।

তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা সবাই একটা জীবনধারার পেছনে ছুটছি, যার সংজ্ঞা ব্যক্তি ভেদে আলাদা। আমরা একই পরিমাণ অর্থে আগের চেয়ে ভালো জীবন যাপন করছি দুবাইয়ে এসে।’

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স-এর ফিলিপ আমারান্তে বলেন, ধনীরা তাদের সম্পদ ও জীবনধারা রক্ষা করতে চান এবং যেখানে অল্প কাগজপত্রে ব্যবসা সম্ভব—সেই জায়গাগুলোকেই তারা বেছে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত অত্যন্ত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, আমরা এখানে বাধাহীনভাবে ব্যবসা করতে পারবো।’

একটা পুরো বিল্ডিং কিনে ফেলা যায়
তবে এই ধনী ব্যক্তিদের ঢল সব সময় বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। ২০২২ সালে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এফএটিএফ-এর ‘গ্রে লিস্ট’-এ রাখা হয়। এরপর দেশটি আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেয় এবং রাশিয়ান অর্থের স্রোতও নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত বেশ কিছু অপরাধী ব্যক্তিকে প্রত্যার্পণও করেছে, যার ফলে ‘গ্রে লিস্ট’ থেকে দেশটির নাম সরানো হয়।

মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা প্রধান ফাইসল দুরানি বলেন, ‘এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধনীরা শুধু বাসা নয়, তাদের পুরো পরিবার, ব্যবসা ও প্রাইভেট অফিসসহ দুবাইয়ে চলে যাচ্ছেন। এটা একটি নতুন ধারা।’

হেনরি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, দুবাই এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ২০ শহরের একটি, যেখানে ৮১ হাজার ২০০ কোটিপতি এবং ২০ জন বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন।

গত বছর দুবাইয়ে ৪৩৫টি ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের বাড়ি বিক্রি হয়েছে, যা নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের সম্মিলিত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

দুররানি বলেন, ‘মোনাকো বা সুইজারল্যান্ড থেকে ধনীরা দুবাইয়ে এসে যদি ১০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট করেন, তখন আমরা বলি, এই দামে আপনি তো একটা পুরো বিল্ডিংই কিনে ফেলতে পারেন!’

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ