অধরা মাল্টিমিডিয়া কার্যক্রম, স্কুলগুলোতে হতাশার চিত্র

শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করেছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। অর্থাৎ, চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের সনাতনী শ্রেণীকক্ষ এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম একটি পদক্ষেপ। কিন্তু জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক হিমেল ধর দেখেছেন হতাশার চিত্র। পড়ুন বিস্তারিত-

‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ কথাটি শুনতে চমক লাগে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে বড় প্রজেক্টর। ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী। যার নাম ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষণ। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও হালে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের প্রচলন শুরু হয়েছে। তবে নগরের বেশিরভাগ স্কুলেই নেই এই সুবিধা। অনেক স্কুলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও, নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কার্যক্রম।

- Advertisement -

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে যে ভিশন হাতে নিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম না থাকাতে তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

- Advertisement -google news follower

নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতা ও অসন্তুষ্টির চিত্র দেখা যায়। বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীই বিষয়টি নিয়ে হতাশ। কাজির দেউড়ি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসে এত বেশি ছাত্রী যে তাদের একসঙ্গে বসিয়ে ডিজিটাল ক্লাস নেওয়ার সুযোগ নেই।

স্কুলটির সহকারী প্রধান শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা তালুকদার জয়নিউজকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলে একটি ল্যাপটপ, একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, একটি স্পিকার ও একটি ইন্টারনেট মডেম (সিমসহ) দেওয়া হয়েছে। সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সংখ্যা মাত্র একটি। শিক্ষার্থী এত বেশি যে তাদের এক রুমে বসিয়ে ক্লাস নেওয়া সম্ভব না।

- Advertisement -islamibank

ছালেহ জহুর সিটি করপোরেশন বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস হলে আমরা ভালোভাবে তা শিখতে পারি। কিন্তু বেশিরভাগ সময় ল্যাপটপ অথবা প্রজেক্টর বন্ধ থাকে।

স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী জুয়েল বলেন, আমরা আইসিটি বিষয়ের থিওরি ক্লাসগুলো করতে পারলেও, ব্যবহারিক ক্লাসের অভাবে কম্পিউটার সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারছি না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন কান্তি দাশ জয়নিউজকে বলেন, সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রজেক্টরটি অনেকদিন ধরে বন্ধ। বলতে গেলে প্রায় নষ্ট। এটি মেরামত করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। স্কুলের পক্ষে বারবার মেরামত করা সম্ভব নয়। নানা কারিগরি জটিলতা ও বাজেট স্বল্পতার কারণে কম্পিউটার ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। আইসিটি ক্লাসের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন সুলতানা জয়নিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়ার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন বেশি। তাই তাদের প্রতি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা অবৈতনিক। আশা করি, শিগগিরই সরকার স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া সমস্যা দূর করার চেষ্টা করবে।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জসিম উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা হয়েছে। সরকার প্রতিটি এমপিওভুক্ত স্কুলে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম দিয়েছে। অনেক স্কুলকে দেওয়া হয়েছে একাধিকবারও। এছাড়া সব স্কুল থেকে নির্দিষ্ট শিক্ষকদের বেশ কয়েকবার হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে কমপক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করাতে হবে। এরপরও যদি কোনো স্কুল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করাতে না পারে, সেটা তাদের ব্যর্থতা। আর মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য কোনো বিশেষ শ্রেণিকক্ষের দরকার হয় না। যে কোনো পরিস্থিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করানো যায়।

তিনি আরো বলেন, এখনো যদি কোনো স্কুল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু না করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক জয়নিউজকে বলেন, একটি নতুন জিনিস ব্যবহার করার আগে সেটির ব্যবহার শিখতে হবে। প্রশিক্ষণ নিয়ে সেই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জনের পরে সেই বিষয় নিয়ে মাঠে নামতে হবে। এজন্য উপযুক্ত লোকবল ও সচেতনতা দরকার।

জয়নিউজ/আরসি
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM