টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সারাদেশের ন্যায় সিটি করপোরেশনসহ চট্টগ্রাম বিভাগেও আগামী ১২ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ কর্মদিবস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র সমূহে এবং ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৮ কর্মদিবস স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র সমূহে অনুষ্ঠিত হবে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি)-২০২৫’। এ সময়ে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী /প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে এক ডোজ টিসিভি টিকা প্রদান করা হবে। এই টিকা পেতে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য (১৭ ডিজিট) দিয়ে ওয়েব সাইটে নিবন্ধন করতে হবে। তবে এ বয়সী কেউ কোন কারণে রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলে তাকেও টিসিভি টিকা দেয়া হবে।
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে এ্যাডভোকেসি সভা আজ ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো: জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ৪৩ হাজার ৬১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ১ হাজার ২৮১টি স্থায়ী কেন্দ্র, ২৩ হাজার ৭৯৬টি আউটরিচ কেন্দ্রে মোট ৯৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯২৬ জন শিশুকে টাইফয়েড টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পেইনে ভ্রাম্যমান হিসেবে ১২৯টি মপ-আপ টিম নিয়োজিত থাকবে।
সভায় বক্তারা চট্টগ্রাম বিভাগে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্হিভূত কমিউনিটির ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে এ টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে সর্বত্র প্রচার-প্রচারণাসহ সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহবান জানান। এই ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিবার ও প্রতিবেশীদের জানাতে হবে। মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের নেতা, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। টাইফয়েড টিকা অত্যন্ত নিরাপদ। এ টিকা গ্রহণের পর অন্যান্য টিকার ন্যায় সামান্য প্রতিক্রিয়া অর্থ্যাৎ টিকাদানের স্থানে লালচে হওয়া, সামান্য ব্যথা, মৃদু জ্বর, ক্লান্তি ভাব ইত্যাদি হতে পারে, যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তাই কোন ধরণের গুজবে কান না দিয়ে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে নির্দিষ্ট দিনে টাইফয়েড টিকা নিতে টিকাদান কেন্দ্র সমূহে আসতে উদ্বুদ্ধ করার আহবান জানান বক্তারা। সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উক্ত কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. ইমং প্রু চৌধুরী।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুসরাত সুলতানা, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবু সালেহ মোঃ ফোরকান উদ্দিন, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ (নোয়াখালী), মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দীন (চাঁদপুর), মোহাম্মদ দিদারুল আলম (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মোঃ আমিরুল কায়ছার (কুমিল্লা), সাইফুল ইসলাম (ফেনী), রাজীব কুমার সরকার (লক্ষীপুর), শামীম আরা রিনি (বান্দরবান), মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ মারূফ (রাঙ্গামাটি), মোঃ আবদুল মান্নান (কক্সবাজার), এক্সিম ইফতেখারুল ইসলাম ইসলাম খন্দকার (খাগড়াছড়ি), মাউশির পরিচালক প্রফেসর মোঃ ফজলুল কাদের, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোঃ আবু সায়েম ভূইয়া, চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বেগম সাহান ওয়াজ, বিভাগীয় উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. কমরুল আযাদ, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম (চট্টগ্রাম), ডা. মোহাম্মদ ছাবের (খাগড়াছড়ি), ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম (ফেনী), ডা. মোঃ আবু হাসান শাহীন (লক্ষীপুর), ডা. ডা. মোঃ নোমান মিয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মোঃ মুছা মিয়া, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আতাউর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফাহমিদা বেগম, সমাজসেবার বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ এ্যাডভোকেসি সভায় অংশ নেন।
সভায় জানানো হয়, টাইফয়েড জ্বর একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে। আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায় বসবাসকারী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কম হলেও বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। টাইফয়েড জ্বর থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের ইপিআই কর্মসূচীর আওতায় দেশব্যাপী আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হবে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (টিসিভি)-২০২৫’।
জেএন/এমআর