শেখ হাসিনার কল রেকর্ডই নয়, মুছে ফেলা হয় অসংখ্য ডিজিটাল আলামত

অনলাইন ডেস্ক

জুলাইজুড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল গোটা দেশ। শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক দাবি-দাওয়া ধীরে ধীরে রূপ নেয় সরকার পতনের একদফা কর্মসূচিতে। রাজপথে নেমে আসেন সাধারণ জনগণও। ঠিক তখনই বারবার বন্ধ করা হয়েছিল ইন্টারনেট সেবা। ফলে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে বাটন ফোন। বাধ্য হয়ে ফোনে কথা বলতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও

- Advertisement -

আন্দোলন দমনে এমপি-মন্ত্রী কিংবা দলীয় নেতাদের ফোনেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ফোনালাপে উঠে আসে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনের নীল নকশা আর নৃশংসতার ইঙ্গিত। তবে এমন অসংখ্য ডিজিটাল আলামত তথা শেখ হাসিনার ফোনালাপের তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে বলে দাবি প্রসিকিউশনের।

- Advertisement -google news follower

সূত্র জানায়, গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ওই দিনই তার ব্যবহৃত চারটি ফোনের প্রায় হাজারও কল রেকর্ডসহ বহু ডিজিটাল আলামত নষ্ট করে দেওয়া হয়। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্বলিত এসব তথ্য বিনষ্ট করেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসির তৎকালীন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।

তথ্য বলছে, জুলাই-আন্দোলনে দেশজুড়ে টানা কয়েকদিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় চারটি ফোন নম্বরে নিজের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলতেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের দিন তথা ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সেসব নম্বরের মালিকানা গায়েব করে দেওয়া হয়। আর এসব নষ্ট করেন জিয়াউল আহসানের কাছেরই একজন লোক। ওই ব্যক্তি নিয়োগ পেয়েছিলেন ওপেন সোর্সের মাধ্যমে।

- Advertisement -islamibank

কী বলছেন প্রসিকিউটর

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও শেখ হাসিনার মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুধু কল রেকর্ডই নয়, অনেক ডিজিটাল আলামত নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেসব আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এ নিয়ে তদন্তও চলমান রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে শনাক্তে চারটি নম্বরই শেখ হাসিনার বলে জানতে পেরেছি। এসব নম্বরের ডিজিটাল প্রমাণ উদ্ধারেও আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল আলামতে অডিও-ভিডিও উপাদান রয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা। সেসব ফোনালাপ উদ্ধারেও আমরা কাজ করছি। এছাড়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক এক পরিকল্পনা মন্ত্রীর কল রেকর্ডও মুছে ফেলা হয়েছে। তবে শিগগিরই আমরা এসব উদ্ধার করতে পারব বলে আশা করছি।

প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২৬তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলেই যাবে যুক্তিতর্কে। এরপর রায়ের পালা। আর এ মামলায় ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর জোহা।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তার দাখিল করা চারটি ফোনালাপ শোনানো হয় ট্রাইব্যুনালে। যার প্রথমটিই ছিল হাসিনা-তাপসের ফোনালাপ। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে হওয়া কথোপকথনও তুলে ধরা হয়। আর এসব ফোনালাপে জুলাই-আগস্টে চলা আন্দোলনকারীদের দেখা মাত্রই গুলি করা, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর দায় ছাপানোসহ বিভিন্ন নির্দেশনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ