জুবিন গর্গের রহস্যমৃত্যু ঘিরে নতুন করে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। গায়কের অকাল মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠবার আগেই এই মৃত্যু নিয়ে উঠে আসে একাধিক প্রশ্ন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শুক্রবার বলেছেন, গত মাসে সিঙ্গাপুরে রাজ্যের সাংস্কৃতিক আইকন জুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্তের জন্য গুয়াহাটি হাইকোর্ট একজন বর্তমান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধের ভিত্তিতে গুয়াহাটি হাইকোর্ট জুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্তের জন্য বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়ার নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে।
শনিবার কমিশন গঠন করা হবে। যাঁদের কাছে কিছু প্রমাণ বা ঘটনা রয়েছে, তাঁদের কমিশনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি’।
জুবিন গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান। ২০শে সেপ্টেম্বর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছিলেন তিনি। যা আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন শ্যামকানু মহন্ত।
গর্গের মৃত্যুর তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল এই মামলায় এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পরপরই বুধবার দিল্লি বিমানবন্দর থেকে এনইআইএফ-এর প্রধান সংগঠক শ্যামকানু মহন্তকে গ্রেফতার করা হয় এবং গর্গের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মাকে গুরুগ্রামে থেকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার পুলিশ জানায়, গর্গের ব্যান্ডমেট শেখরজ্যোতি গোস্বামী এবং গায়ক অমৃতপ্রভা মহন্তকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিআইডি প্রাথমিকভাবে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং অবহেলার কারণে মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত একটি মামলা দায়ের করেছে।
বৃহস্পতিবার শ্যামকানু মহন্ত ও সিদ্ধার্থ শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের অভিযোগও যুক্ত করে সিআইডি। সংস্থাটি জালিয়াতি এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে মহন্তের বিরুদ্ধে পৃথক মামলাও দায়ের করেছে।
‘এফআইআরে নাম থাকা চারজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে এবং ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। গর্গকে ন্যায়বিচার দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের এবং আমরা তা নিষ্ঠার সঙ্গে করব’, জানান হিমন্ত শর্মা।
সাগরে স্কুবা ডাইভিং গিয়ে গর্গের মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকা সিঙ্গাপুরের অসমিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও এগিয়ে এসে তদন্তে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তা না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সিঙ্গাপুর থেকে গর্গের মৃতদেহ আনার পরে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর অসমে জুবিন গর্গের শবদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল।
সিঙ্গাপুরের জারি করা ডেথ সার্টিফিকেটে জানানো হয়েছে জলে ডোবার জেরেই মৃত্যু হয়েছে গায়কের এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে কোনওরকম ফাউল প্লে-র সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে করা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বৃহস্পতিবার গর্গের স্ত্রী গারিমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁকে দেওয়া হবে। তিনি এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চান কিনা সেই সিদ্ধান্ত জুবিনের বিধবা স্ত্রীর। রাজ্য সরকার সেই রিপোর্ট আদালতের সঙ্গে ভাগ করে নেবে।
৫২ বছর বয়সী গায়ক, সুরকার, কবি, অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা জুবিন গর্গ গত পাঁচ বছরে একাধিকবার মৃগী রোগের শিকার হয়েছেন, এর জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তাঁর এই অবস্থার কারণে চিকিৎসকরা তাকে জল ও আগুন থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সিঙ্গাপুরে বসবাসরত কিছু অসমীয়া অনাবাসী ভারতীয় আয়োজিত একটি ইয়ট ট্রিপের সময় লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে মৃত্যু হয় জুবিন গর্গের। তাঁর ম্যানেজার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
কীভাবে জুবিন গর্গকে জলে নামতে দিলেন ম্যানেজার? সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। শুক্রবার গর্গের স্ত্রী গরিমা এই মামলায় আদালতে নিজের বয়ান রেকর্ড করেন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের অনুরোধ জানান।
নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের আয়োজক এবং গায়ক জুবিন গর্গের মৃত্যুর মূল অভিযুক্ত মহন্ত তদন্ত স্থানান্তরের চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
৩০ সেপ্টেম্বর দায়ের করা পিটিশনে শীর্ষ আদালতকে আসাম পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) থেকে তদন্তটি জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন মহন্ত। হিন্দুস্থান টাইমস