চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ি এলাকা দখলে নিতে ইয়াছিন গ্রুপের সঙ্গে রোকন-গফুর ও সরোয়ার বাবলার বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ব্যাপক গোলাগুলির হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রোকন বাহিনীর এক সন্ত্রাসী গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার তথ্য পুলিশ নিশ্চিত করলেও ঘটনার দুদিন পরও তার পরিচয় জানাতে পারেনি। এছাড়া উভয় গ্রুপের আরও অন্তত ১৩ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনার পরপর বিশেষ অভিযান শুরু করে পুলিশ।
শনিবার (৫ অক্টোবর) চমেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-জাহিদ (৩৫), জয়নাল (৩২) ও জিহাদ (৪০)।
গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারে একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে ইয়াছিন গ্রুপ রোকন উদ্দিন মেম্বার গ্রুপকে দায়ী করে এবং আবার আরকেটি পক্ষ দাবি করে ইয়াছিন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা রোকন গ্রুপের একজনকে নাকি পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
ওসি আরও বলেন, ঘটনার দুই দিনেও আমরা নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাইনি। কারণ সেখানে অধিকাংশ মানুষ ভ্রাম্যমাণ। সন্ত্রাসীরাও বহিরাগত। এখন সিআইডিকে বলা হয়েছে ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করে তার পরিচয় শনাক্ত করতে। সে চেষ্টা চলছে। তার পরিচয় পাওয়া গেলে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
এছাড়া এসব ঘটনায় ইয়াছিন বা রোকন কেউ জড়িত আছে কিনা তা এখনো আমরা নিশ্চিত হইনি। নিহত ব্যক্তির কোন স্বজনের হদিস পাওয়া গেলে তারা যাকে আসামি করে মামলা করতে চান তাকে আসামি করেই হত্যা মামলা হবে।
ওসি বলেন, কেউ বাদী না হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হবে। এ ঘটনায় এবং অস্ত্র উদ্ধারে আমরা ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে তারা ৩ জনই আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। সেখানেই গ্রেপ্তার আছে তারা।
এর আগে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর আলিনগর এলাকায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সংঘর্ষে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে ভাড়া নিয়ে গেছে রোকন মেম্বার। এতে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তবে ঘটনার পরে রোকন বাহিনীর অনেক সদস্য নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা- নিখোঁজ যে কয়েকজন রয়েছে তারা রোকন বাহিনীর সদস্য।
গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে- জাবেদ (৩৮), জাকির (৪৮), তানভীর (২৩), সিরাজুল ইসলাম (৪৩), ফজলুল করিম, ইসমাইল হোসেন বাবু (৩০) জাহিদুল ইসলাম (১৯), সৌরভ বড়ুয়া (১৭) মো. পারভেজ (২০), নুরুল আলম (৪০), শুক্কুর আলম (২২), রায়হান (১৮), শামীম (২৯)। আহতদের মধ্যে অনেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
তবে ইয়াছিন বাহিনীর কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে তার তথ্য জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে স্থানীয় ছলিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রোকন মেম্বার ও গোলাম গফুরের নেতৃত্বে ছলিমপুর, ফৌজদারট, আল মদিনা, সিডিএ, ফকিরহাট, বাংলাবাজার, শেরশাহ এলাকার শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী
জঙ্গলছলিমপুর আলিনগর দখল করতে যায়।
এ সময় আলিনগর দখলে থাকা ইয়াছিন বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে রোকন-গফুর বাহিনীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত। আহত হয়েছেন ১৬ জন। আহতদের চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীতাকুণ্ড সার্কেল সহকারী কমিশনার লাবিব আবদুল্লাহ বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন মারা গেছে। তবে তার নাম পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গুলিবিদ্ধ ১৩ জনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে।