৭ প্রকল্পে স্বপ্ন দেখাচ্ছে চট্টগ্রামকে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত হওয়ার পথে চট্টগ্রাম অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বপ্নপূরণের ৭ প্রকল্প হলোÑ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, মিরসরাই ইকোনমিক জোন, বন্দরের বে টার্মিনাল, কালুরঘাট সেতু পুনর্নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সন্দ্বীপের বিদ্যুৎ প্রকল্প।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন
প্রধানমন্ত্রীর আটটি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি হলো দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কক্সবাজার ঘিরে রেলের অবকাঠামোগত বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ রুটে রেলপথ নির্মাণ তারই অংশ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত এ রুটে মোট ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সে অনুযায়ী এ দফায় দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেয় সরকার। ২০১৭ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়।
রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রথম লট দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চুক্তির মূল্য ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় লট চকরিয়া রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০২ কোটি ৫ লাখ ২ হাজার টাকা। অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ চুক্তির মূল্য ৬ হাজার ১৯০ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ রেলপথ ও অবকাঠামো প্রকল্পটির দায়িত্বে আছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত চীনা প্রতিষ্ঠান সিওটি এবং বাকি অংশের দায়িত্বে নিযুক্ত সিসিইসিসি ও ম্যাক্স।
এ রেলপথের উদ্দেশ্য পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা। প্রকল্পে কক্সবাজারে ঝিলংজা ইউনিয়নে ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হবে নান্দনিক একটি রেলওয়ে টার্মিনাল।
টার্মিনালটি ঘিরে গড়ে উঠবে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, বিপণিবিতান, বহুতল আবাসিক ভবনসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প। এরই মধ্যে স্থাপনাগুলোর নকশাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেলপথটি ইরান থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও চীনের রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। পরে যশোর, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে ভারত যাবে। আর তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে তৈরি হবে ২৭টি দেশের রেল নেটওয়ার্ক।
মিরসরাই ইকোনমিক জোন
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোন। এরমধ্যে ২৫টি আলাদা জোন হবে। ৩০ হাজার একর জমির উপর এই ইকোনমিক জোন স্থাপন হচ্ছে। বেজা চরের জমির মধ্যে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক তৈরি করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইজেড পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে। চার লেনের এ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি। চলতি বছরে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। একইসঙ্গে মেরিন ড্রাইভ সড়ক যেটি কক্সবাজার পর্যন্ত যাচ্ছে, সেটি এই জোনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। সমুদ্রের জোয়ারের পানি থেকে এ শিল্পশহর রক্ষার জন্য ১ হাজার ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে জোন ঘেঁষে যে সমুদ্র উপকূল আছে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নেভি ও চায়না হারবারকে দিয়ে সাড়ে ১৮ কিলোমিটারের আরেকটি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হচ্ছে। চায়না হারবার কোম্পানি ইতোমধ্যে ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। এ বাঁধ তৈরিতে ব্যবস্থাপনার কাজ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেখানে এ সমস্ত অবকাঠামোগত সুবিধা ছাড়াও অভ্যন্তরীণ যেসব সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলো ফোর লেন হবে। মিরসরাইয়ে জমি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে।
সেখানে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। মিরসরাইয়ে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড বা আরপিসিএল। একই সংস্থা ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য বেজার কাছে ৫০ একর জমি চেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর চিঠি পাঠিয়েছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য মিরসরাইয়ে দুই একরের জলাধার তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ফেনী নদীর পানি ব্যবহার করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে (আইডব্লিউএম) নিয়োগ করার প্রক্রিয়া চলছে। যেটি হলে কলকারখানায় পানি নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ফেনী নদীর দুটি শাখা নদী থেকে পাঁচটি সরোবর তৈরি করা হবে। যার প্রতিটি ১০০ থেকে ১২৬ একরের হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে প্রকল্পের অবস্থানের কারণে বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থনৈতিক অঞ্চলটির আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া সরকারি উদ্যোগে রাস্তা, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতের সুযোগ থাকা এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলেই সমুদ্র তীরবর্তী আলাদা সমুদ্রবন্দর সুবিধা থাকার কারণেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। মিরসরাই ইজেড এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করছে বেজা।
এদিকে ইজেডের একটি অংশে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে পিজিসিবি ২৩০ কেভি গ্রিড স্টেশন স্থাপন করবে। মিরসরাইয়ে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এই শিল্পশহরের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
বে-টার্মিনাল
সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা ধরে রাখতে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বে-টার্মিনাল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে। পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার ট্রাক জেটিতে প্রবেশ করে। বে টার্মিনাল এলাকা থেকে এলসিএল পণ্য ডেলিভারি শুরু হলে জেটিতে প্রবেশের প্রয়োজন পড়বে না অন্তত ৫ হাজার ট্রাকের।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলির রাশমনি ঘাট পর্যন্ত উপকূলের প্রায় ৬ কিলোমিটারজুড়ে নির্মিত হবে বে টার্মিনাল। জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ারের প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ দিন-রাত যাওয়া আসা করতে পারবে জাহাজ। বর্তমানে ৯.৫ মিটারের বেশি গভীরতা নিয়ে জাহাজ জেটিতে আসতে পারে না। বে টার্মিনাল হলে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৯টি জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বে টার্মিনালে একই সময়ে বার্থিং নিতে পারবে ৩৫টি জাহাজ। বে টার্মিনালের অপারেশনাল এরিয়া হবে বর্তমান সুবিধার ছয় গুণ বেশি। এদিকে মিরসরাইয়ে একটি জেটি নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ডেনমার্কভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রেমবলকে নিয়োজিত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কালুরঘাট সেতু পুনর্নির্মাণ
বোয়ালখালীর মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর পুনর্নির্মাণ। তাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে শুরু হবে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর পুনর্নিমাণ কাজ। দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এ সেতু নির্মাণে অর্থের যোগান দিবে। এজন্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট বোয়ালখালী অংশে রেললাইন কাম সেতু নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা নির্ভর করছে চট্টগ্রামের উন্নয়নের ওপর। বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার বৃহত্তর চট্টগ্রাম ঘিরে বিশেষ করে মিরসরাই থেকে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি পর্যন্ত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ চট্টগ্রাম সিঙ্গাপুর হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্ণফুলী টানেল
বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কর্ণফুলীর তলদেশে। ৩৫ ফুট চওড়া দুই টিউবের টানেল নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরের সময় কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেন। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। বর্তমানে প্রকল্পের ১৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। টানেলের একপ্রান্ত শুরু হবে নেভাল একাডেমী পয়েন্টে এবং অপরপ্রান্ত গিয়ে উঠবে কাফকো ও সিইউএফএল-এর মাঝামাঝিতে।
৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ টানেলটি নদীর তলদেশে সর্বনিম্ন ৩৬ ফুট (১২ মিটার) এবং সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট (৩৬ মিটার) গভীরে স্থাপন করা দুটি স্কেল বসানো থাকবে। এই স্কেল দিয়ে দুই লেনে চলবে গাড়ি। একই রকম আরেকটি টিউব থাকবে পাশে। আর দুটি টিউবের মধ্যে কমপক্ষে ১১ মিটার জায়গা খালি থাকবে। এটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেল নির্মাণ শুরুর প্রথমে তিন বছরে নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার বছরে। ইতোমধ্যে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা উপজেলার অংশে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সিইউএফএল সংলগ্ন মাঝেরচর এলাকায় প্রকল্পের সাইট অফিস, আবাসস্থল ও যন্ত্রপাতি রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ঘর।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত দু’বছর ধরে প্রকল্পের উপযোগী করে গড়ে তোলার পর শুরু হচ্ছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল কাজ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা।
এদিকে কয়লা আনার জন্য ইতোমধ্যে ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) চ্যানেল তৈরির মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে এ এলাকায়। প্রকল্পটি চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ হবে। প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ, টাউনশিপ গড়ে তোলাসহ আনুষঙ্গিক কাজের প্রায় ১৭ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে বর্তমানে ৪০০ শ্রমিক কাজ করছেন। পর্যায়ক্রমে আরো দুই হাজার শ্রমিক এ প্রকল্পে যোগ দেবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।
এছাড়া মাতারবাড়িতে আরও তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র্র স্থাপনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। গতবছর এই দুই দেশের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এদিকে এলএনজি আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল করারও পরিকল্পনা আছে সরকারের। ২০২৩ সালে প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।
সন্দ্বীপে সমুদ্র তলদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ
চট্টগ্রাম জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ সন্দ্বীপ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ৪ লাখ মানুষের এ জনপদ। দেশের প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বর্তমান সরকারের ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচির আওতায় জাতীয় গ্রিড থেকে সন্দ্বীপ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে প্রকল্পটির জন্য ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সম্প্রতি সন্দ্বীপবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত এ সাবমেরিন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন অপটিক কেবলের মাধ্যমে সীতাকু-ের বাকখালী থেকে সন্দ্বীপের বাউরিয়া পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানলে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটারজুড়ে টানা হয়েছে সাবমেরিন কেবল, এর মাধ্যমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চীনের এইচডিএসএস, জেডটিটি ও সিসিই তিনটি কোম্পানি যৌথভাবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। পূর্ব সন্দ্বীপ হাইস্কুল সংলগ্ন গুপ্তছড়া-সন্দ্বীপ সড়কের পাশে এগিয়ে চলছে পাওয়ার সাবস্টেশনের নির্মাণকাজ।