বিদেশি দ্রব্যে এদেশের মানুষের সহজাত আকর্ষণের কথা সর্বজনস্বীকৃত। তবে সব ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। দাম যতই বাড়ুক না কেন, দেশের প্রধান খাদ্যদ্রব্য চালের বিক্রি কিন্তু দেশিটাই বেশি! ৯০ শতাংশ ক্রেতাই যখন দেশে উৎপাদিত চালের ভোক্তা, তখন দেশি চালের ব্যবসায়ে লাভটাও স্বাভাবিকভাবে একটু বেশিই হয়। সরেজমিন ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মনির ফয়সাল।
দেশি চালের দাম বাড়লে বিদেশি চালের চাহিদা বাড়বে, এমন ধারণা খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আপনি যদি ঠিক তাই ভেবে থাকেন, তবে আপনি ভুল ভাবছেন। প্রকৃতপক্ষে আমদানি করা চাল মানসম্পন্ন না হওয়ায় দাম যতই বাড়ুক, দেশের ৯০ শতাংশ ক্রেতার পছন্দের তালিকায় দেশে উৎপাদিত চালই সবসময়ই শীর্ষে থাকে।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম জয়নিউজকে বলেন, আমাদের দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্রেতাদের কাছে দেশি চালের চাহিদা রয়েছে ৯০ শতাংশ। কারণ বাইরের দেশের চালের চেয়ে দেশে উৎপাদিত চাল বেশি ভালো মানের। তবে কৃষকরা যদি ধানের ন্যায্যমূল্য না পান তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে চালের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানিকৃত চালের চেয়ে দেশীয় চালকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। দাম বেশি হলেও মানের কারণে দেশে চালই বেশি পছন্দ তাদের।
চাক্তাই ও পাহাড়তলীর বেশ কয়েকটি চালের আড়ত ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে দিনাজপুর, নওঁগা, বগুড়া, মহাদেবপুর, নবাবগঞ্জ, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র অঞ্চলে চাল সরবরাহ করা হয়।
পাইকারী বিক্রেতারা জানান, মোটা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায় ও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। স্বর্ণা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩২ টাকা ও বস্তা ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ৩১ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে পারিজা সিদ্ধ ও বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকা। বালাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৪ টাকা ও প্রতি বস্তার দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা। মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে বস্তায় ১ হাজার ৮৫০ টাকা ও কেজি প্রতি ৩৭ টাকা। বেতি আতপ প্রতি বস্তা ১ হাজার ৭০০ টাকা ও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকায়। কেজি প্রতি ৪০ টাকায় ও বস্তায় ২ হাজার টাকায় মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ৭৬ টাকা থেকে ৮৬ টাকা কেজিতে ও বস্তায় ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিনিগুড়া চাল। কাটারী চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে বস্তায় ২ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায় ও কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা থেকে ৫৮ টাকায়। ইরি চাল প্রতি কেজি ২৪ টাকায় ও বস্তা প্রতি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি নাজিরশাইল চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৬ টাকায় প্রতি কেজি ও বস্তায় ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, উত্তরবঙ্গের সিন্ডিকেটের কারণে নির্বাচনের পর চালের দাম কিছুটা বেড়েছিল। তবে বর্তমানে দেশে ধান ও চালের প্রচুর পরিমাণ মজুদ রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের কারণে তাই চালের দাম এখন কমে আসছে। তিনি আরো বলেন, ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দেশীয় চাল। আমদানি করা চাল মানসম্পন্ন না হওয়াতেই মূলত ক্রেতারা দেশীয় চাল বেশি পছন্দ করে।
তিনি জানান, ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে দেশে চাল আমদানি করা হয়। তবে চাহিদা না থাকায় আমদানির পরিমাণ আগের চেয়ে এখন অনেক কমে আসছে।
জানা যায়, আমদানিকৃত ইন্ডিয়ান আতপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা ও বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। থাইল্যান্ডের আতপ চাল বস্তা ১ হাজার ৭০০ টাকায় ও প্রতি কেজি ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে। ইন্ডিয়ান নাজির শাইল চাল বাজারে ৫২ টাকা কেজি ও ২ হাজার ৬০০ টাকায় বস্তা বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের আতপ চাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকায় ও ৫০ কেজি বস্তার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
নগরের খুচরা দোকানগুলো ঘুরে জানা যায়, বিক্রেতাদের কাছে দেশি ও আমদানিকৃত দুই ধরনের চালই রয়েছে। তবে বিক্রি বেশি হচ্ছে দেশি চাল। অবশ্য দেশি চালের দাম বেড়ে গেলে তখন বিদেশি চালের বিক্রি কিছুটা বাড়ে।