পতেঙ্গায় সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজের চুক্তি হয়েছে সাত মাস আগে। অথচ এখনো নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত না হওয়ায় এ দীর্ঘসূত্রিতা। এতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। বেড়ে যেতে পারে প্রকল্পব্যয়।
এ ব্যাপারে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আখতারুল হক জয়নিউজকে বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটির ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তা অনুমোদনও হয়েছে। এখন মূল কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। প্ল্যান্টটি নির্মাণের জন্য জায়গা নির্বাচন করা আছে। এখন কন্ট্রাক্টর সিলেকশনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এটা চূড়ান্ত হলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি ২০২১ সালের মধ্যে দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদার ৭৫ শতাংশ পূরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ২৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। ইস্টার্ন রিফাইনারি তাদের দ্বিতীয় শোধনাগার (যা ইউনিট-২ নামে পরিচিত) নির্মাণ করতে যাচ্ছে। ১৭ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা। এটি বাস্তবায়িত হলে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে আরও প্রায় ৫০ শতাংশ।
পতেঙ্গায় বর্তমান স্থাপনার পাশেই নতুন স্থাপনাটি নির্মিত হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে এবং ৮৮১ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটের মাধ্যমে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল শোধন করা যায়। দুই নম্বর ইউনিট চালু হলে সক্ষমতা আরও ৩০ লাখ টন বাড়বে। অর্থাৎ তখন বছরে ৪৫ লাখ টন তেল পরিশোধন করা যাবে।
মহেশখালীতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্রুড অয়েল এবং ফিনিশড প্রোডাক্টসের পরিবহন ও সিস্টেম লসসহ বার্ষিক প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে এবং ১১৯ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বিপিসির তথ্যমতে, সারাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এ জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল আমদানির মধ্য দিয়ে। পরিশোধিত (পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল প্রভৃতি) তেল চড়া দামে আমদানি করতে হয়। সে তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত বা ক্রুড অয়েলের দাম অনেক কম। দেশের বাইরে থেকে ক্রুড অয়েল আমদানির পর তা ইআরএল প্ল্যান্টে পরিশোধন করে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিনসহ ১৬ প্রকারের পেট্রোলিয়াম পণ্যে রূপান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছিলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে ইআরএলের ইউনিট-২ প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বহুল প্রতীক্ষিত এই প্ল্যান্টটি নির্মিত হলে জ্বালানি খাতে সরকারের খরচ অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।