‘মিতুর মা সবসময় ওকে ফোনে কুমন্ত্রণা দিত। এমনকি বিয়ের পর বাচ্চাও নিতে দেয়নি। সবসময় বলত বাচ্চা নিলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে, শরীর ভেঙে যাবে। তারপরও মিতুকে আমি নিজের মেয়ের মতো দেখতাম। এত কিছুর পরও আজ আমাকে আমার ছেলের মরা মুখ দেখতে হল। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমার ছেলেকে দাফন করব না’।
নিজের নাড়িছেঁড়া ধনকে অকালে হারিয়ে নিজ বাসায় এভাবেই বিলাপ করছিলেন ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের (৩২) মা জোবাইদা খানম। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আত্মীয়-স্বজন ও আকাশের বন্ধুরা। কিন্তু ছেলেহারা মায়ের মন যেন কিছুতেই মানছিল না। ছেলের রুমের বিভিন্ন জিনিস দেখিয়ে অঝোরে কেঁদেই চলেছেন জোবাইদা। বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে ডা. আকাশের নগরের চান্দগাঁও আবাসিকের বি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসায় এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
কাঁদতে কাঁদতে জোবাইদা বলেন, বিয়ের পর থেকেই ঘরে অশান্তি। ওই মেয়ের (মিতু) অনেক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি কিছু জানতাম না। আকাশ জেনেও বুকে কষ্ট নিয়ে ঘর করেছে। কিন্তু বিয়ের পরও ওর এসব অভ্যাস যায়নি। একের পর এক ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে।
তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভোররাতে এসব নিয়ে মিতুর সঙ্গে আকাশের ঝগড়া হয়। তখন আকাশ মিতুর বাবাকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বলে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মিতুর বাবার বাড়ি থেকে গাড়ি আসে তাকে নিতে। সে চলে যায়। এরপর আকাশ মনমরা হয়ে সোফায় এসে বসে। মোবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিল। হয়ত তখনই মিতুর ছবিগুলো ফেসবুকে দিচ্ছিল। আমি এসে তার পাশে বসি। তখন আকাশ আমাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে। এরপর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঢলে পড়ে। হয়ত এর আগেই সে ইনজেকশন পুশ করেছে শরীরে। পরে ওর ঘরের বাথরুমে গিয়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পড়ে থাকতে দেখি।
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আকাশের মা বলেন, দিনের পর দিন মানসিক অত্যাচার করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে মিতু। ও আত্মহত্যা করেনি, ওকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি ছেলের লাশ দাফন করব না।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ভোরে স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে শরীরে ইনসুলিন ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ (৩২)। মৃত্যুর আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের স্ত্রী মিতুর সঙ্গে অন্য ছেলেদের অন্তরঙ্গ ছবি ও চ্যাটের স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। সর্বশেষ ভোর ৪টা ৫২ মিনিটে নিজের স্ত্রীর সাথে একটি ছবি পোস্ট করে তিনি আত্মহত্যা করেন।