চট্টগ্রামে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। মামলা দায়ের হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এছাড়া আকাশের আত্মহত্যায় মিতুর কোনো বন্ধুর প্ররোচনা আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। যদি প্ররোচনার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার ( উত্তর) মো. মিজানুর রহমান। সকাল ১১টায় সিএমপির কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে নগরের নন্দনকানন এলাকায় আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে তার খালাতো ভাইয়ের বাসা থেকে আটক করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। মিতুকে আটকের ঘটনায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিএমপি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চিকিৎসক আকাশের আত্মহত্যায় তাঁর ফেসবুক আইডিতে স্ত্রীকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস এবং আকাশের পরিবারের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মিতুকে নগরের নন্দনকাননের একটি বাসা থেকে আটক করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আটকের পর মিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরকীয়া এবং স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ নিয়ে মিতু কিছু কিছু বিষয় স্বীকার করেছেন। আর কিছু বিষয় তিনি এড়িয়ে গেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ করেছেন সেসব বিষয় যাচাই-বাছাই চলছে। আকাশের মৃত্যুর পেছনে যদি তাদের কারো ইন্ধন থাকে তবে তাদেরও বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আটকের পর মিতুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাহ আমানত (র.) মাজার এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও পুলিশ জব্দ করেছে বলে জানা গেছে। পরে শুক্রবার ভোর থেকে আকাশ তার ফেসবুকে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ও বিভিন্ন ছবি সম্বলিত যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তা ডিলিট করে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. আকাশের সঙ্গে মিতুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর পড়াশোনার জন্য ইউএসএ চলে যায় মিতু। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দেশে ফেরে মিতু। এরপর দু’জনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ আরো প্রকট হয়ে উঠে।
বৃহষ্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতভর আকাশের চাঁদগাও আবাসিক এলাকার বাসায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। ওই সময় আকাশের বাসায় একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। যে ভিডিওতে মিতু তার একাধিক বন্ধুর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। তবে ভিডিও ধারণের সময় মিতুকে আতঙ্কিত দেখা গেছে এবং তার ঠোঁট রক্তাক্ত ছিল।
দু‘জনের ঝগড়ার একপর্যায়ে মিতুর বাবা ইঞ্জিনিয়ার আনিসুল হক চৌধুরী দিবাগত রাত ৪টার দিকে স্বামীর বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। এরপর আকাশ ফেসবুকে মিতুকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মির্জা সায়েম মাহমুদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার, চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার ও পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের সৈয়দ।
এ সংক্রান্ত আরো ও পডুন :
- ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চিকিৎসকের আত্মহত্যা, কেন?
- ‘বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে দাফন করব না’
- পুলিশের সাথে এ কেমন আচরণ করলেন ডা. আকাশের স্ত্রী মিতুর ! #JOY_TV
- ডা. আকাশের আত্মহত্যায় কারো প্ররোচনা থাকলে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ | Joynewsbd
- আত্মহননকারী চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রীর স্বীকার উক্তি ও সন্তান হারিয়ে মায়ের আহাজারি