বাঁশখালীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) মেধাবী ছাত্র মো. সাইয়ান মুনতাসির নিয়াদে খাতা গায়েবের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। ইতোমধ্যে দুই পরীক্ষককে জেলা পুনঃনিরীক্ষণ কমিটিতে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জানা যায়, মুনতাসির নিয়াদ এ+ পাওয়ার পরও চার বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদন করায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তার ইংরেজি খাতাটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। আবেদনকারীর অভিভাবক বিষয়টি জানতে পেরে অনলাইনের পরিবর্তে আবার লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে। অভিযোগ ওঠেছে নানা কৌশলে পিইসি পরীক্ষায় এ+ বাণিজ্যে লিপ্ত একদল শিক্ষক বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ব্যবহার করছেন।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিস ও ভুক্তভোগী অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মো. সাইয়ান মুনতাসির নিয়াদ ২০১৮ সালের পিইসি পরীক্ষায় (রোল নং-৫৪০৯ ও আইডি নং-১১২০১৮৪১১০১০৫৪০৯) বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯৫, গণিতে ৯১, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৫, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৫, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় ৯০ সহ মোট ৫৫৮ নম্বর পেয়ে এ+ পায়। এতেও তার বাবা মো. শাহজাহান সন্তুষ্ট নন।
শাহজাহানের দাবি, আমার ছেলে আরো ভালো রেজাল্ট করবে। ৬০০ নম্বর না পেলেও অন্তত ৫৯৫ নম্বর পাবে। তাই আমি অনলাইনে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে। পুনঃনিরীক্ষণ কমিটি খাতা পুনঃনিরীক্ষণ করতে গিয়ে দেখতে পান আমার ছাত্রের ইংরেজি খাতা গায়েব হয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সংশ্লিষ্টরা খাতাটি উদ্ধার করতে পারেননি ।
এদিকে এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মোস্তাক আহমেদ জেলা শিক্ষা পুনঃ নিরীক্ষণ কমিটি বরাবরে ইংরেজি খাতার প্রধান পরীক্ষক দক্ষিণ নাপোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কচির উদ্দিন ও পরীক্ষক কানুনগোখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এ প্রতিবেদন পেয়ে ওই দুই শিক্ষককে জেলা পুনঃনিরীক্ষণ কমিটি তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনকারী অভিভাবক মো. শাহজাহান জয়নিউজকে বলেন, আমার ছেলে একটি কে জি স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল। গতবছর বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সমাপনী মডেল টেস্ট পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে সে ভালো রেজাল্ট করে। কিন্তু সমাপনী পরীক্ষায় দেখি আমার ছাত্রের চেয়ে খারাপ রেজাল্ট করা ছাত্র-ছাত্রীরা রহস্যজনকভাবে ভালো রেজাল্ট করেছে। ওই স্কুলের এক শিক্ষক তাঁর সন্তানকে ভালো রেজাল্ট করিয়ে দেওয়ার জন্য জালিয়তি করে আমার ছেলের ফলাফল খারাপ করে দিয়েছে। এমনকি খাতাও গায়েব করার চক্রান্ত করেছে। আমি বিষয়টি জেনে পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণের সময় বাঁশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকবার গেছি। ওখানে কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন না। কতিপয় শিক্ষক যার যার মতো করে খাতা টানাটানি করে খাতা মূল্যায়ন করেছেন। বিষয়টি দেখে আমি শঙ্কায় ভুগি। পরীক্ষার ফলাফলেও দেখা গেছে খারাপ অবস্থা। তাই আমি চার বিষয়ে আবেদন করেছি। এরপর শুনেছি আমার ছেলের ইংরেজি খাতা গায়েব। এজন্য অনলাইনের পরিবর্তে এবার লিখিত অভিযোগ করেছি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে। যাতে আমার ছেলের খাতাগুলোর সঠিক মূল্যায়ন হয়। সঠিক মূল্যায়ন না হলে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করবো। না হলে সব ছাত্র-ছাত্রীর খাতা পুনঃমূল্যায়নের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করব। আমি চাইব দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বিচার হোক। অবুঝ শিশুদের নিয়ে কেন এ শিক্ষকরা বাণিজ্য করবেন?
এদিকে প্রধান পরীক্ষক দক্ষিণ নাপোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কচির উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই। আমি খাতা নিরীক্ষণের পর উপজেলা শিক্ষা অফিসে মার্কশিটসহ খাতাগুলো জমা দিয়েছি। বিষয়টি কেন হলো জানি না।
পরীক্ষক কানুনগোখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি জেলা কমিটিতে যা বলার লিখিত জানিয়েছি। খাতার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মোস্তাক আহমেদ বলেন, ওই ছাত্রের ইংরেজি খাতাটি খুঁজে পাচ্ছি না। জেলা পুনঃনিরীক্ষণ কমিটিতে একবার গিয়ে শিক্ষকরাসহ জবাব দিয়েছি। এখন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার ছুটিতে। আবারো হাজির হয়ে যা ঘটেছে জানাব।
খাতাটি না পেলে কি করবেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যা হওয়ার হবে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে তবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কারো চাপ নেই।
বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, খাতা পুনঃনিরীক্ষণ ও গায়েবের ব্যাপারে কিছইু জানি না। ওগুলো শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়।
এ ব্যাপারে জানতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানার মোবাইল ও টিএন্ডটি নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঋষিকেশ শীল বলেন, খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি আছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। এসব ব্যাপারে সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে।