তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মৃত্যুর ঘটনায় একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে মিতু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। আকাশের পরিবার প্রথম থেকেই মিতু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছিল। আকাশকে মানসিক অত্যাচার, মিতু ও তার পরিবারের সদস্যদের উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন, কাবিননামার টাকা আদায়ের জন্য আকাশকে ডিভোর্স না দেওয়া, এমনকি মিতুর ভাইয়ের অসুস্থতাকে পুঁজি করে ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে বিষয়গুলো এখন আলোচনার বিষয়। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা।
ডা. আকাশের ছোট ভাই ডা. মঞ্জুর মোরশেদ অসীম জয়নিউজকে বলেন, যখন মিতুর সঙ্গে ভাইয়ের বনিবনা হচ্ছিল না, তখন ভাই অনেকবার মিতুকে বলেছিল তাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য। কিন্তু কাবিননামার টাকা উসুল করার জন্য মিতু ও তার পরিবার ভাইকে ডিভোর্স দিচ্ছিল না। ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই অন্য পুরুষের সঙ্গে দিব্যি শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল মিতু। এগুলো নিয়ে আকাশ ভাই মানসিক যন্ত্রণায় ছিল। কিন্তু কখনো কাউকে বুঝতে দেননি। মিতুর বোন আমেরিকা থেকে আসার আগে আকাশ ভাই তাকে টাকা দিয়েছিল আমাদের জন্য জুতা আনার জন্য। কারণ তার বোন কোনোদিন আমাদের জন্য কিছু আনত না। কিন্তু নিজের শ্বশুরবাড়ির সম্মান রক্ষার্থে আকাশ ভাই নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েছিল।
মিতুর মা শামীম শেলীর সমালোচনা করে অসীম বলেন, মিতুর মায়ের জন্যই আজ আমাদের এই অবস্থা। একদিন আকাশ ভাই তাকে ভিডিও কল দিয়ে প্যাটেলের সঙ্গে মিতুর শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেন। মিতুর মায়ের উত্তর ছিল, ‘আমিও প্যাটেলের সঙ্গে শুয়েছি! এতে সমস্যা কোথায়!’ এ কথা শুনে আকাশ ভাই আরো মুষড়ে পড়েন।
মিতুর ছোট বোন আলিশা প্রায় সময় আকাশকে ফোনে বকাঝকা করত বলেও জানান অসীম। তিনি বলেন, আলিশা সব সময় ভাইয়ের কাছে টাকা চাইত। টাকা দিতে না পারলে বকাঝকা করত।
মিতুর বাবা আনিসুল হক চৌধুরীকে মেরুদণ্ডহীন মানুষ উল্লেখ করে অসীম বলেন, উনি নিজের বউ আর মেয়েদের কথায় চলেন। তাদের পরিবারে মিতুর মা’র কথাই শেষ কথা। আর মিতুর বাবা তার স্ত্রীর আদেশ পালন করেন।
আকাশের ছোটভাই বলেন, মিতুর মেজ বোনের বিয়ে ঠিক হয় সৈনিক নামের একটি ছেলের সঙ্গে। সেখানেও ৫০ লাখ টাকা কাবিন দাবি করেছিল তারা। পরে ৩৫ লাখ টাকায় কাবিন হয়। আসলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে বিচ্ছেদ করিয়ে কাবিনের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের ব্যবসা। বিয়ে তাদের কাছে একটি ছেলেখেলা। আমার ভাইয়ের কাছ থেকে কাবিনের টাকা নেওয়ার জন্য তাকে সবসময় মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে গেছে।
মিতুর মৃত ভাই আরমানের কথা উল্লেখ করে অসীম বলেন, আরমানের ক্যান্সার হওয়ার পর তারা নিজেদের থেকে কোনো টাকা-পয়সা খরচ করেনি। উল্টো আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নেয়। আমিও নিজের কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিই। সবমিলিয়ে ৮০ লাখ টাকা ওঠে তখন। কিন্তু ওই টাকা আরমানের চিকিৎসায় খরচ না করে তারা নিজেদের বিলাসিতা চালাতে থাকে। পরে আমি মিতুকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে বলে, টাকা চিকিৎসায় খরচ করেছি। কিন্তু কোনো হিসাব তারা দিতে পারেনি।
আকাশের ব্যাপারে জানতে চাইলে তার এক সাবেক ছাত্রী ডা. জয়া পাল জয়নিউজকে বলেন, আকাশ ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। নিজের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের অনেক ভালোবাসতেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে তার কাছে ফোন আসত। ফোনে কথা বলার পর তিনি মনমরা হয়ে যেতেন। অনেক সময় আমরা বুঝতাম, তার মনের ভেতরে অনেক যুদ্ধ চলছে। শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা আকাশ ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।