দুর্গার পরে এবার আসছে সরস্বতী। মহানগরীর মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমার গায়ে শেষ প্রলেপ। উচ্চতা বাড়িয়ে তাক লাগাচ্ছে এপাড়া-ওপাড়া’র পুজো উদ্যোক্তারা। ঠাকুর আনা, বাজার করা, আলপনা দেওয়া— সরস্বতী পুজোর সব ঝক্কি সামলাতে অপেক্ষার প্রহর গুণছে হিন্দু বিদ্যার্থীর দল। চট্টগ্রামের মণ্ডপ ঘুরে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি দেখে এসেছেন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক পার্থ প্রতীম নন্দী ও নিজস্ব আলোকচিত্রী বাচ্চু বড়ুয়া
মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বেদ-বেদান্ত-বেদাঙ্গ আর বিদ্যাস্থানে বিল্ব পত্র দিয়ে আবাহন করা হয় দেবী সরস্বতীর। মাঘ মাসের এ তিথিতে বিদ্যা, জ্ঞান ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রামের পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজসহ বাসা বাড়ি জুড়ে চলছে সাজ-সজ্জ্বা, গেট-প্যান্ডেল নির্মাণসহ ব্যাপক প্রস্তুতি। নানা রঙ-পোশাক অলঙ্কারে দারুণভাবে সাজিয়ে শেষ মুহূর্তের রং তুলির আঁচড়ে দেবীর প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা।
এক বছর চাতক-প্রতীক্ষার পর রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দেশজুড়ে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সরস্বতী পুজো মানেই শুধু রোদ-রঙা হলুদ শাড়ি নয় কেবল, অনেকে কিশোরীর জন্য প্রথম শাড়ি পড়ে শিহরিত হওয়ারও দিন। সারাদিন বই না ছোঁয়া, মণ্ডপ পরিভ্রমণ, অঞ্জলী নেয়া, উপোস রাখা, টো টো কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার দিন এসেছে। আজকের শিশু, ভবিষ্যতের ‘বিদ্যাসাগর-আইনস্টাইন’দের হাতে খড়ির দিনও পূজার দিন।
দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে মৃৎ শিল্পীদের। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাছ শেষ করতে হবে। যেন দম ফেলারও ফুসরত নেই! সদরঘাট কালীবাড়ি সরেজমিননে ঘুরে দেখা গেল প্রতিমা তৈরির ধুম। প্রতিমাশিল্পী আশীষ দাশ জয়নিউজকে বলেন, “এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। কিছু প্রতিমার কাজ শেষ করে মন্দিরে পাঠানো হয়েছে। এখানে প্রায় ৫০ টা প্রতিমা বানানো হয়েছে। সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দামের প্রতিমার এখানে বিক্রি হচ্ছে।” ২০ হাজার টাকা দামের প্রতিমাটা প্রায় ১৬ ফুট উচ্চতার বলেও তিনি জানান।
গোসাইঁলডাঙ্গা কালীবাড়ির পেছনের মাঠে কুড়ি-ত্রিশটি নানান আকৃতির সরস্বতী প্রতিমা। গভীর মনযোগে প্রতিমার গায়ে শেষ প্রলেপ দিচ্ছে শিল্পী। এলাকার বয়জ্যেষ্ঠ রতন মল্লিক জয়নিউজকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মহাসমারোহে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এই এলাকার সকল পূজার প্রতিমা এখানেই বানানো হয়। স্থায়ী মণ্ডপের পূজা ছাড়াও সরস্বতী পূজা অনেক ভবনের ছাদেও ব্যক্তিগত-পারিবারিক উদ্যোগে হয়।
এদিকে নগরের হাজারিগলিতে সরস্বতী প্রতিমা, ফলমূলের পাশাপাশি দেবী সাজানোর মালা, পূজার ফুল, বেলপাতা, আমের মুকুল, কলাপাতাসহ পূজার প্রয়োজনীয় নানান রকম সামগ্রীর পসরা নিয়ে ব্যবসায়ীরা হাজির হয়েছেন।