চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী। সম্প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে তাঁর একটি বক্তব্যে তোলপাড় হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে মারধর করার কথা বলেন চবি উপাচার্য। এ নিয়ে বুহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) সকালে ফেইসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেন হিতাংশু গুহ নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। জয়নিউজের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
মাননীয় উপাচার্য, সদ্য দেশে প্রকাশিত বিবিধ মিডিয়ায় আপনার একটি বক্তব্য দেখে অতিশয় ব্যথিত হয়ে আপনার কাছে এই ই-মেইল করছি। একইসাথে এটি মিডিয়াতে দিচ্ছি। সামাজিক মাধ্যমেও দিলাম।
মাননীয় উপাচার্য আপনি বলেছেন, ‘আমি জীবদ্দশায় একবার হলেও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হাকে পেটাতে চাই’। বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ অনুষদ মিলনায়নে ১৪ই আগস্ট ’১৮-এ আপনি এ দম্ভোক্তি করেন। আপনি যে মুখ ফস্কে এ কথা বলে ফেলেছেন তা নয়, বরং আপনি বেশ স্পষ্ট করে দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, ‘এস কে সিন্হাকে যদি কোথাও পাই, আমি দু’টো থাপ্পড় দিয়ে ছাড়বো, আমি দেবোই, কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না’।
মাননীয় উপাচার্য, আপনি এমন কথা বললেন কি করে! একজন উপাচার্যের মুখে কি এ কথা মানায়! আপনি তো শিক্ষক। আপনার এ বক্তব্য থেকে আপনার ছাত্রছাত্রীরা কি শিখবে? কাকে খুশি করতে আপনি এমন কথা বলতে পারলেন? আপনার কি আর কিছু পাওয়ার আছে? একজন উপাচার্য তো জাতির সম্পদ। জাতির গর্ব। আমরা আপনাকে নিয়ে গর্ব করি কি করে! একজন উপাচার্যের মুখে তো আমরা এমন কথা শুনতে অভ্যস্ত নই।
মাননীয় উপাচার্য, আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, আমি আপনাকে সম্মানিত উপাচার্য বলতে পারছি না। এ আমার দৈন্যতা নয়! আমি আপনাকে স্যারও বলতে পারছি না! কোথাও বাঁধছে। অথচ সকল উপাচার্যকে আমরা স্যার বলতে অভ্যস্ত। বলতে চাই। কিছুদিন আগে একটি ছোটখাট অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন জাতীয় ইউনিভার্সিটি’র সাবেক উপাচার্য ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য। সময় পেরিয়ে তিনি একটু বেশিই বলছিলেন। একজন মৃদু প্রতিবাদ জানান। সাথে সাথে পুরো হাউস তাকে তিরস্কার করে এবং তিনি ক্ষমা চান। আমরা তো নয়ই, ওখানে একজনও তার ছাত্র ছিলো না। অথচ সবাই তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করে সম্মান জানান। মাননীয় উপাচার্য, এটাই কি হওয়া উচিত নয়!
আপনি হয়তো বলতে পারেন, মাত্র ক’দিন আগে ঢাকা ভার্সিটি’র উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ’উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বংশধর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। একদা উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন তার ম্যাডামকে খুশি করতে ‘যা খুশি তাই’ বলতেন। অধ্যাপক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনের কথাও বলতে পারেন। মাননীয় উপাচার্য, অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনকে লোকে ঠাট্টা করে ‘ইয়েসউদ্দিন’ বলতেন। শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বানিয়ে ড. আখতারুজ্জামান নিজেও রাজাকার হয়েছেন। ইয়াজউদ্দিনের কথা নাইবা বললাম। তবে আমি আমার উপাচার্য ড. মতিন স্যারের কথা বলবো। মতিন স্যার (আব্দুল মতিন চৌধুরী) নাই, কিন্তু আজো তার যে কোনো ছাত্র তাকে শ্রদ্ধাভরে ‘মতিন স্যার’ বলে। মাননীয় উপাচার্য, উপাচার্যের আসনটি শ্রদ্ধার, এই ডেকোরাম কি নষ্ট হতে দেয়া উচিত?
মাননীয় উপাচার্য, আপনি জানেন, বিদ্যা বিনয় দান করে। আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, আপনি এ কথা বলেছেন। কিন্তু আপনার কথা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। হাজার হাজার মন্তব্য আসছে তো আসছেই? কলকাতার এক ভদ্রলোক আপনার যোগ্যতা নিয়ে কৌতুক করে বলেছেন, ‘উপাচার্য তো দূরের কথা, কলকাতায় তিনি কোনো কলেজের কেরানিও হতে পারতেন না।’ আমরা কিন্তু তা মনে করি না। ‘গুগুল’ ঘেঁটে দেখেছি, আপনি জাপান থেকে পিএচডি করেছেন। উপাচার্য তিন বছর। এসএসসি ১৯৭০। তবে উইকিপিডিয়ায় আপনার টুপি পড়া ছবিটি কাউকে মুশতাকের টুপির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।
মাননীয় উপাচার্য, মানুষ মাত্রই ভুল করে। ভুল শুধরে নেয়াটাই মূলকথা। শিক্ষার্থীরা ক’দিন আগে নিরাপদ সড়ক দাবি করেছে। আমরাও শিক্ষকদের কাছে ‘শিক্ষণীয়’ কিছু আশা করি, দাবি করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো আপনাদের কাছ থেকে শিখবে। দেশ ও জাতি গড়ার দায়িত্ব তো শিক্ষকের।
সবশেষে মাননীয় উপাচার্য, যে মহান নেতার শোক দিবসে আপনি এমন বক্তব্য রেখেছেন, সেই বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা ভার্সিটি বহিষ্কার করেছিলো। কিন্তু, তিনি কখনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলেছেন, এমন দুর্নাম নিন্দুকেরাও করেন না। জীবনের সিকিভাগ তিনি জেলখানায় কাটিয়েছেন, কিন্তু কোনো বিচারকের প্রতি তিনি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, এমন তথ্য ইতিহাস দেয় না। কাজেই, মাননীয় উপাচার্য, ‘আপনি আচরি ধর্ম’। একজন উপাচার্যের কাছে জাতি যা আশা করে, আপনি তাই হউন। আপনার মঙ্গল কামনা করি। আমাদের সুযোগ দিন, যাতে আপনাকে ‘সম্মানিত ও স্যার’ সম্বোধন করে ধন্য হতে পারি। ধন্যবাদ।
লেখকের ফোন নম্বর: ৬৪৬-৬৯৬-৫৫৬৯।
জয়নিউজ/আরসি