রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টা পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে হাসপাতালে লাগা এই আগুনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেখানে অবস্থান করা রোগী ও তাদের স্বজনরা। এসময় সেখানে ছিলেন প্রায় ১২০০ রোগী। তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে নিরাপদে বের করা হয় এবং খোলা মাঠে আশ্রয় নেন তারা।
পরে রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিডফোর্ড) পাঠানো হয়।
কিছু রোগীকে তার আত্মীয়রা প্রাইভেট ক্লিনিক ও বাসায় নিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলার স্টোর রুমে আগুন লাগে। খবর পেয়ে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে কয়েকটি ইউনিট কাজ শুরু করলেও আগুনের পরিধি বাড়লে পর্যায়ক্রমে ১৬টি ইউনিট কাজে নামে।
হাসপাতালের তৃতীয় তলার স্টোর রুমে আগুন লাগার পরপরই কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। এতে পুরো হাসপাতাল অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। রোগী ও তাদের স্বজনরা আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকে। এসময় হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই রোগীদের নিরাপদে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যান।
অনেক রোগীকেই হাসপাতালের সামনের সড়কে দেখা গেছে। আইসিইউতে থাকা রোগীদেরও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা রোগীদের মধ্যে যারা মুমূর্ষু তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। যাদের অন্য হাসপাতালে না নিলেও চলে তাদের আপাতত হাসপাতাল সংলগ্ন খোলা মাঠে রাখা হয়। এছাড়াও তুলনামূলক কম অসুস্থ রোগীদের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রলীগের নেতাদের সেখান থেকে রোগীদের সরিয়ে নিতে এবং আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করতে দেখা গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগুন লাগার পর বেশ কিছু রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে রোগীদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে রোগীদের অসুস্থতার ধরন অনুসারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। জনবল বাড়ানো হয়েছে। আনসার সদস্যদেরও কাজে লাগানো হয়েছে ও যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সগুলো সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টা পর রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝামাঝি একটি জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগুন লাগার ঘটনা উদঘাটনে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কেউ হতাহত হয়নি। হাসপাতালের সব রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমারকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবেন।