জানুয়ারিতে মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজার পোশাক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, রেডিমেট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন।
তাদের একজন রাবেয়া। নিজের ন্যায্য দাবি আদায়ে ঢাকার রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। ৯ ফেব্রুয়ারি কর্মস্থল মুন রেডিওয়্যার লিমিটেড থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাকে জানিয়ে দেয়া হয়, পরদিন থেকে যেন আর কাজে না ফেরেন।
রাবেয়া জানান, বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার কারণে তার মতো অনেক শ্রমিককেই এমন ছাঁটাইয়ের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ন্যায্য দাবি আদায়ে কথা বলেছি, এটাই আমার অপরাধ।
রাবেয়া স্যুইং অপারেটর। মাসে ৯ হাজার ৬০০ টাকা বেতন পেতেন। তিনি বলেন, দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই বস ডেকে বললেন, বাড়ি ফিরে যাও। তোমার চাকরি নেই।
বাংলাদেশ সরকার তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে প্রতিবছর ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার আয় করে। যা রপ্তানি খাতে মোট আয়ের ৮৩ শতাংশ।
আমেরিকার পেনসিলভ্যানিয়া ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মার্কি অ্যানারের মতে, বিশ্বের সস্তায় মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ তালিকায় মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
তবে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের কয়েকদিন আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার। নির্বাচনের পর শ্রমিকরা সেই বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানায়। মালিকপক্ষ দাবি না মানায় আন্দোলনে নামেন তারা। আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগ এনে ৩ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মুন রেডিওয়্যার লিমিটেড সেতারা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। তারা এক দশক যাবৎ সুইডিস বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এইডএ্যান্ডএমের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আনোয়ার কামাল পাশা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটা এক ধরনের শ্রম অভিবাসন। এরপরও আমার কোম্পানিতে যদি কোনো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সেটা শ্রমিকদের অনুপস্থিতির কারণে, আন্দোলনের জন্য নয়, যোগ করেন পাশা।
এ প্রতিবেদক মুন রেডিওয়্যারের তিন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের একজন আব্দুল মান্না। যিনি কোয়ালিটি ইনসপেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বলেন, বুধবার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মোহাম্মদ রানা নামের অপর শ্রমিক জানান, আন্দোলনের সময় তাকে আটক করা হয়। কোম্পানিতে ভাংচুরের অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে তিনি চাকরি হারিয়েছেন।
তৃতীয় জন হলেন আব্দুল মান্নান। তিনিও চাকরি হারিয়েছেন। তবে কারণ জানাতে রাজি নন তিনি। কারণ এখনো তিনি কোম্পানি থেকে বেতন পাননি।
এসব অভিযোগ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি প্রতিষ্ঠানের মালিক আনোয়ার কামাল পাশা।
এদিকে হেনজ অ্যান্ড মার্টিজ এবির (এইচএ্যান্ডএম) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা জানতে পেরেছে তিনটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। যারা এইচএ্যান্ডএমর প্রোডাক্ট তৈরি করছিল।
বিবৃতিতে জানানো হয়, আমরা গভীরভাবে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু সুলতান বেতন কাঠামো এখনো সব কোম্পানি বাস্তবায়ন করেনি জানিয়ে জয়নিউজকে বলেন, কিছু কোম্পানি নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করেছে। বাকিরা এখনো করেনি। তবে কোন কোন কোম্পানি আইন বাস্তবায়ন করেনি তা চিহ্নিত করা যায়নি।