বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির প্রতিটি গণআন্দোলনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন চট্টগ্রামের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের নাট্যচর্চা কিংবা মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা, সবক্ষেত্রেই বন্দরনগরের মানুষের আগ্রহের কথা সর্বজনস্বীকৃত। চট্টগ্রামের মানুষ সবসময়ই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান, পড়তে চান। তাই এবারের চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধের বই বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বইমেলা ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মনির ফয়সাল ও হিমেল ধর।
এবারের অমর একুশে বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। একাত্তরের রণাঙ্গনের সঠিক ইতিহাস জানাতে অভিভাবকরা সন্তানকে কিনে দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের বই।
বইমেলা ঘুরে জানা যায়, স্টলগুলোতে এবার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইগুলোই বিক্রি হচ্ছে বেশি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাকলী প্রকাশনীর ‘বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ‘, আগামী প্রকাশনীর ‘নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ইতিহাসের অকাট্য দলিল’ ও ইউপিএল প্রকাশনীর ‘মূলধারা একাত্তর’। এছাড়াও বইমেলায় রয়েছে আনিসুজ্জামানের ‘আমার একাত্তর’, রশীদ হায়দারের ‘১৯৭১ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা’, মাহবুব আলমের ‘গেরিলা যুদ্ধ থেকে সম্মুখ যুদ্ধে’, মন্টু খানের ‘হায়েনার খাঁচায় অদম্য জীবন’, মেজর জেনারেল মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের (অব.) ‘পূর্বাপর ১৯৭১’, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ ও হাসান আজিজুল হকের ‘একাত্তর: করতলে ছিন্ন মাথা’।
নন্দন বইঘরের স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, ‘এবারের বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত বইয়ের চাহিদা রয়েছে বেশি। সব বয়সের পাঠকরাই কিনছেন মুক্তিযুদ্ধের বই। এছাড়া ছোটদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ছবিযুক্ত বই। তরুণ পাঠকরা ডিটেকটিভ থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন ও উপন্যাস জাতীয় বই কিনছেন বেশি। পাঠকদের পছন্দের এই বইগুলো আমরা ঢাকা থেকে নিয়ে আসছি। আশা করছি এবার মেলায় ভালো বই বিক্রি হবে।’
অক্ষরবৃত্তের নির্বাহী পরিচালক কাজী যোহের জয়নিউজকে বলেন, ‘দশম দিনে বইমেলায় ১৪ হাজার টাকার বই বিক্রি করেছি। তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে মুক্তিযুদ্ধের বই কিনে দিচ্ছে। পাঠকদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দামের বই রয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের পাশাপাশি শিশুদের বইয়েরও ভালো চাহিদা রয়েছে।’
কথা হলো বইপ্রেমী বিশু মজুমদারের সঙ্গে। জয়নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের বইমেলার পরিবেশ অন্যরকম। প্রতি বছর ঢাকায় বইমেলায় যাওয়া হয়। তবে এবার চট্টগ্রামের বইমেলায় এসে ভাল লাগছে। এখানে সব লেখকের বই পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সব বইগুলো চট্টগ্রামের বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। এখন আর বইয়ের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে হচ্ছে না। ঢাকার সব প্রকাশনীগুলো এখন চট্টগ্রামের এই বইমেলায় স্টল দিয়েছে।‘
বইমেলাতেই দেখা হয়ে গেল দেশের জনপ্রিয় নাট্যজন মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপকে সবচেয়ে বেশি ধারণ করেছে। বাংলাদেশের মঞ্চনাটক মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ শিল্প শস্য। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের নাট্যাঙ্গন ছিল অদ্বিতীয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটি পর্বেই রয়েছে চট্টগ্রামের বিদ্রোহী ভূমিকা।’
তিনি বলেন, ‘ভাষার মাসে দেশব্যাপী বইমেলার উৎসব চলছে। চট্টগ্রামের একুশের বইমেলাতেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। আমি এখানে এসে আনন্দিত। বইমেলার কারণে আজকের সময়ের তরুণরা ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বের হয়ে বই কিনতে আগ্রহী হবে। নাটক, চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম আবহমান বাঙালির চিরায়ত রূপটাকে উপলব্ধি করতে পারবে।’