বন্দরনগরের সবুজবেষ্টিত নান্দনিক এক পাহাড়ভূমি টাইগারপাস। দুই পাশের দুই পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে একনজরে দেখে নেওয়া যায় পুরো চট্টগ্রামের অনেকটাই। এরমধ্যে একপাশের পাহাড়- বাটালি হিলের চূড়ায় উঠলে দেখা মিলবে শতায়ু অঙ্গনের। যেখানটায় নাগরিক ব্যস্ততা ভুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দু’দন্ড বিশ্রামের সুযোগ মেলে। আর কী আছে টাইগারপাসে? আসুন জেনে নেওয়া যাক জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক হিমেল ধরের প্রতিবেদনে। সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্রী বাচ্চু বড়ুয়া।
টাইগারপাস নামটি ব্রিটিশের দেওয়া। একসময় এখানকার পুরো এলাকাই ছিল পাহাড়ঘেরা। সেই সময় এসব পাহাড় ছিল নানা ধরনের পশু-পাখি-জীবের আবাসস্থল। তখন বাঘের দেখাও মিলতো এখানে।
সময় গড়ালে প্রয়োজনের তাগিদে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। পাহাড়ের পরিধি কমতে থাকে। গড়ে উঠে একের পর এক আবাসস্থল। তবে এখনও টাইগারপাসে গেলে সবুজবেষ্টিত দুই পাহাড়ের দেখা মেলে।
নগরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে টাইগারপাসের বাটালি হিল। এটি চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় পাহাড়। এর উচ্চতা ২৮০ ফুট।
লালখান বাজার হয়ে টাইগারপাস এলাকায় গেলেই হাতের ডানপাশে মিলবে পাহাড়মুখী ছোট্ট একটি রাস্তা। কোলাহলময় ব্যস্ত নাগরিক জীবন থেকে একটু স্বস্তি পেতে চাইলে এই রাস্তা ধরে উঠে যেতে পারেন বাটালি হিলের চূড়ায়। যে চূড়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের একটা বড় অংশ দেখা যায়।
পাহাড়টির নাম বাটালি হিল হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি জিলাপি হিল বা জিলাপি পাহাড় নামে পরিচিত। এই পাহাড়ে ওঠার রাস্তাটা জিলাপির প্যাঁচের মতো এঁকেবেঁকে চূড়ায় দিকে উঠেছে। তাই স্থানীয়ভাবে এই পাহাড়ের নাম জিলাপি পাহাড়।
জিলাপি পাহাড় বা বাটালি হিলের চূড়ার স্থানটির নাম ‘শতায়ু অঙ্গন’। জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বাটালি পাহাড়ের চূড়াতেই বিমান বিধ্বংসী কামান স্থাপন করা হয়েছিল। এই বাটালি হিলে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করে।
বাটালি হিলের চূড়ায় আছে বসার ব্যবস্থা। সকাল, বিকেল, সন্ধ্যায়- এখানে মানুষের ভিড় জমে। কেউ আড্ডা দেন, আবার কেউ একা বসে শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে টাইগারপাসের পাহাড়ের পাদদেশে স্থাপন করা হয় বাঘের ভাস্কর্য। অনেকে সেলফি তোলেন, অনেকে আবার শুধু এই প্রতীকী বাঘগুলোকে সামনে থেকে দেখতে ছুটে আসেন।
নগরের সবচেয়ে সুন্দর ও সুপরিসর সড়কগুলোর একটি টাইগারপাস রোড। পাহাড়ঘেরা দুই পাশের ফুটপাতে বিকেলে হাঁটতে পছন্দ করেন অনেকেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল-বিকেল নানা বয়সী শত শত মানুষ এখানে হাঁটেন। কেউ কেউ বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেন। অনেকে আবার দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়টি দেখতে আসেন।
শুক্রবার বিকেলে এ পাহাড়ে হাঁটতে আসা ৪০ বছর বয়সী এম এ হান্নান জয়নিউজকে বলেন, আমি লালখান বাজার এলাকায় থাকি। প্রায় বিকেলেই এখানে হাঁটতে আসি। শহরের মাঝে এমন নিরিবিলি পরিবেশ আর কোথাও নেই। তাই আর এখানে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে।
বাটালি হিলে ঘুরতে আসা সরকারি মহসিন কলেজের অনার্সের ছাত্রী নুসরাত জাহান জয়নিউজকে বলেন, আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায় সময়ই এখানে আসি। আড্ডা দিই। অনেক নিরিবিলি এই জায়গাটা। বিকেলের সময়টা যখন মন খারাপ থাকে, তখন এখানে আসলে খুব ভালো লাগে।