কথায় বলে, চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) চোরেরা খুব সম্ভবত সেই কথাকেই প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এমনিতেই রোগে ভুগে কষ্টের শেষ নেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চোরের উৎপাত। অভিযোগ আছে, এই চোরদের ধরা হলেও সাজা খেটে এসে আবার তারা চুরিতে লেগে পড়ে। তাই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী আর তাদের স্বজনদের প্রশ্ন একটাই- চমেকের এই চোরদের উপযুক্ত ‘চিকিৎসা’ করবে কে?
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগীর শুশ্রুষায় সারা দিন ব্যস্ত সময় কাটান তাদের স্বজনেরা। রাতে যখন তারা ঘুমিয়ে পড়েন তখন সক্রিয় হয় একদল সংঘবদ্ধ চোর। কখনো মোবাইল, কখনো ব্যাগ, এমনকি জুতা পর্যন্ত চুরি করে ফেলছে এই চোরের দল।
চমেককে রোগীবান্ধব করে ঢেলে সাজানোয় যখন প্রশাসন-ডাক্তাররা ব্যস্ত, তখন এই সংঘবদ্ধ চোরদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে চমেকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তার উপর নষ্ট হয়ে আছে মেডিকেলের নিরাপত্তার জন্য লাগানো বেশিরভাগ সিসিটিভি ক্যামেরা। ভুক্তভোগীদের সন্দেহ, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত মেডিকেল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। আয়া-ওয়ার্ড বয়দের ওপর তাই সব ক্ষোভ উগরে দেন ভুক্তভোগীরা।
দিন দিন বেড়েই চলছে এই চোরচক্রের উৎপাত। রাতের বেলায় রোগীদের ঘুমানোর প্রয়োজনে বন্ধ করতে হয় ওয়ার্ডের লাইট। আর তখন ‘সুযোগের সদ্ব্যবহার’ করে চোরের দল। মোবাইল, মহিলাদের হাত ব্যাগ ছাড়াও রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, দামি ইঞ্জেকশন, ডায়াবেটিস মাপার মেশিন থাকে চুরির টার্গেটে উপরের দিকে। সেসব যদি নিতে নাও পারে, বেডের নিচে রাখা জুতা পর্যন্ত তারা চুরি করে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের ১২নং ওয়ার্ডের হৃদরোগ বিভাগে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন তাপসী মল্লিক জয়নিউজকে বলেন, ‘রাতের বেলায় রোগীকে নিয়ে বাথরুমে যেতে হয়েছিল। ৫ মিনিট পর এসে দেখি ওষুধসহ ব্যাগ, মেডিকেল থেকে সরবরাহ করা রোগীর ব্যবস্থাপত্র এবং বিগত পাঁচ বছরের রোগীর চিকিৎসাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র চুরি হয়ে গেছে! রোগী নিয়ে আমরা এমনিতেই থাকি উৎকন্ঠার মধ্যে, তার উপর যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা কী করব?’
তিনি আরো বলেন, ‘চমেক পরিচালকের কাছে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, হৃদরোগ বিভাগের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরাই নষ্ট। তাই চোরের কোন ফুটেজ পাওয়া যায়নি।’ একইরকম অভিজ্ঞতা প্রায় সব ভুক্তভোগীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহসিন জয়নিউজকে বলেন, ‘মোবাইল চুরির ব্যাপারে কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে না। তাছাড়া হাসপাতালে মোবাইল আনা নিষেধ। এরপরও কেউ আনলে তা নিজ হেফাজতে রাখা উচিত। হাসপাতালের জন্যে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জয়নিউজকে বলেন, ‘আমরা এই চোরদের ধরতে সবসময় সচেষ্ট থাকি। সংঘবদ্ধ চক্র ছাড়াও কেউ কেউ একাও চুরি করে। আবার রোগী সেজেও অনেকে পাশের বেডের রোগীর মালপত্র চুরি করছে। আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে হাসপাতালের ১৬নং ওয়ার্ড থেকে এক রোগীর মোবাইল চুরির সময় জামসেদ (১৮) নামে এক চোর এবং সঙ্গে দুই দালালকে হাতেনাতে আটক করি।’
তিনি বলেন, ‘এর আগেও মোবাইল ফোন চুরির অপরাধে অনেকবার তাকে হাতেনাতে ধরে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে সে আবারো হাসপাতালে এসে মোবাইল ফোন চুরি করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অভিযোগকারীরা পরে আর কোন যোগাযোগ করেন না। বাদী সাক্ষী না দেওয়ায় মামলা চোরদের পক্ষে যায়। তারা ছাড়া পেয়ে আবারো একই কাজে যুক্ত হচ্ছে।’