তিন কারণে গতি নেই আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়নকাজে। বৈদ্যুতিক খুঁটি, ওয়াসার পাম্প ও গ্যাস পাইপলাইন থাকার কারণে উন্নয়নকাজে গতি আসছে না। এতে একদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় জনতা, শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের, অন্যদিকে ভীষণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ রোডের ব্যবসায়ীরা।
কাজের ধীরগতির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রয়েল এসোসিয়েটের স্বত্বাধিকারী দিদারুল আলম জয়নিউজকে বলেন, রাস্তার কাজ করতে গেলে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ওয়াসার পাম্প, গ্যাস পাইপলাইনের কারণে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারছি না। এ কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো (পিডিবি, ওয়াসা, কেজিডিসিএল) তেমন সহযোগিতা করছে না। সেবা প্রতিষ্ঠানের লোকজন একদিন এলে আরেক দিন আসেন না। এ কারণে কাজ করতে গিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে।
প্রকল্পটি দু’বার করে টেন্ডার হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে সিডিউলে ছিল শুধু কার্পেটিং করা। পরবর্তীতে রাস্তায় পানি উঠার কারণে মাটি ভরাট করে ফের কার্পেটিং করতে বলা হয়েছে। এজন্য জাইকা থেকে অনুমোদন নিতে সময় লেগে যায় তিন মাস। এরপরও আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।
জানা যায়, নগরের জনভোগান্তি দূর এবং আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সড়কটিতে উন্নয়নকাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রকল্পটির প্রজেক্ট ডিরেক্টর এলজিইডি এবং দায়িত্ব ও অর্থায়নে রয়েছে জাইকা। আর তত্ত্বাবধান করছে চসিক।
এদিকে প্রকল্পটির দায়িত্বে জাইকা থাকলেও দুর্ভোগের সব দায় গিয়ে পড়ছে চসিকের ওপর। অথচ পুরো কাজের দায়িত্বে রয়েছে জাইকা।
প্রকল্পটি দু’বার সিডিউল দেওয়া হয়। প্রথমবার কার্পেটিংয়ের জন্য, পরবর্তীতে রাস্তায় পানি উঠার কারণে মাটি ভরাটের জন্য। এজন্য কাজ শুরু করতে দেরি হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়নকাজের জন্য বিভিন্ন দোকানের সামনে রাখা হয়েছে ইট, বালি ও মাটি। ইট, বালি ও মাটির স্তূপের কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। এতে দিনের পর দিন লোকসান গুনছেন তারা। অভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের। এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে গাড়ি, দুর্ঘটনায় পড়ছে মানুষ।
চসিক সূত্রে জানা যায়, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর। চলতি বছরের ১৫ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদার কাজ শেষ করতে না পারলেও আইনিভাবে সময় বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
চসিক সূত্রে আরো জানা যায়, জাইকা ও সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ১৩৬ কোটি টাকা। নিমতলা থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘে্যর সড়কটি ১২০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। উভয় পাশে নির্মিত হবে আড়াই মিটারের আরসিসি ড্রেন। অপরদিকে আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কের উন্নয়নকাজে ব্যয় হবে ৫১ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের উভয়পাশে আড়াই মিটার প্রশস্ত আরসিসি ড্রেন, আড়াই মিটার ফুটপাত, আট লেনের সড়ক এবং দৃষ্টিনন্দন বাগানসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
এ সড়কে থাকবে ২৫০টি এলইডি লাইট। এছাড়া মহেশখালের ওপর নির্মিত হবে তিনটি সেতু এবং খালের পাশে চার কিলোমিটার প্রতিরোধ দেয়াল। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের আওতায় নিমতলা পোর্ট কানেকটিং থেকে নয়াবাজার এবং আগ্রাবাদ বাদামতলী থেকে বড়পুল পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ জয়নিউজকে বলেন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোডে উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে নানান জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে চসিককে। নানা জটিলতা থাকা শর্তেও এই সড়কের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের ব্রিক ড্রেনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। আরসিসি ড্রেনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্কেভেটরের মাধ্যমে কাদামাটি অপসারণের কাজ চলমান। বালি ফিলিং, সাব বেইজডের কাজ চলছে। পোর্ট কানেকটিং রোডের আরসিসি ড্রেনের কাজও চলছে।
জোয়ারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পোর্ট কানেকটিং সড়ক আরও উঁচু করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পোর্ট কানেকটিং সড়কটি খুবই ব্যস্ত। এর উপর দিয়ে পণ্যবাহী হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের আধিক্যের কারণে পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এ কারণে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘে্যর তিন মিটার চওড়া ফুটপাত তৈরি করা হচ্ছে। সড়কের মাঝখানে আড়াই মিটার চওড়া দৃষ্টিনন্দন বাগানসহ মিডিয়ান করা হবে। এলইডি লাইট দিয়ে আলোকায়ণ করা হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, বন্দরের পণ্য পরিবহনে রোড দুটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ সড়ক দিয়ে বন্দর থেকে পণ্য বা কনটেইনারবাহী পরিবহন ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে যাতায়াত করে। রোড দুটির উন্নয়নকাজ বাস্তবায়িত হলে বন্দরের পণ্য পরিবহনের গতিশীলতা ফিরে আসবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলেও তিনি আশা করেন। একইসঙ্গে তিনি উন্নয়নকাজ চলাকালীন সময়ে সড়কগুলোতে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট সৃষ্টি না করার জন্য বাস, ট্রাক, লরি ও কনটেইনার মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।