চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র হল থেকে বহিরাগত এক ছাত্রীকে উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ওই ছাত্রীকে উদ্ধারের আগে-পরে চবি হল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। সচেতন মহলের প্রশ্ন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে বহিরাগত ওই ছাত্রী ঢুকলেন কীভাবে? আরো প্রশ্ন উঠেছে- তাকে উদ্ধারের পর শুধু মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়ে দায় সারতে চাওয়া নিয়েও।
জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ওই ছাত্রীকে হলের অতিথিকক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু হল প্রশাসন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কেউ সে খবর জানতেন না! পরে কাকতালীয়ভাবে ওই রাতে পুলিশ ওই হলে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির একপর্যায়ে উদ্ধার করা হয় সরকারি সিটি কলেজের সেই ছাত্রীকে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় কীভাবে একজন ছাত্রীকে আটকে রাখা হয়েছিল? বিশ্ববিদ্যালয় বা হল প্রশাসন এ বিষয়ে কোন তথ্য জানেন না কেন? এ ঘটনার দায় কার? জয়নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনেক কিছু।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অপরাধেই অভিযুক্তরা শুধু মুচলেকা দিয়েই ছাড়া পেয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। বড় অপরাধের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আস্থাভাজন হলে শোকজ আর সাময়িক বহিষ্কারেই সীমাবদ্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ‘একাডেমিক ব্যবস্থা’। আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরোধী পক্ষের কেউ হলে তাকে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি।
সূত্র জানায়, চবি শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল ও শাহ আমানত হলে তল্লাশি অভিযান চালায় চবি প্রক্টরিয়াল বডি ও হাটহাজারী থানা পুলিশ। এসময় ১৬ জনকে আটক করা হয়। ঘটনাচক্রে ওই অভিযানে সোহরাওয়ার্দী হলের অতিথি কক্ষ থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বহিরাগত এক তরুণীকে।
জানা যায়, মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র খাইরুল ইসলামের বান্ধবী। মেয়েটি চট্টগ্রাম নগরের সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। প্রায় ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্ক তাদের। সেদিন খাইরুলকে না জানিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে যাওয়ায় রাতে চট্টগ্রাম শহরে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এসময় তাকে মারধরও করে খাইরুল। পরে শহর থেকে জোর করে তাকে চবির সোহরাওয়ার্দী হলে নিয়ে এসে অতিথি কক্ষে তালা বদ্ধ করে রাখা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আকস্মিক অভিযানে তালাবদ্ধ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করার পর নিজ কক্ষ থেকে খাইরুলকেও আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন (২৫ ফেব্রুয়ারি) তিন ছাত্রলীগ নেতার নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হলেও খাইরুল ও মেয়েটিকে ছেড়ে দেওয়া হয় মুচলেকা নিয়ে। এ ঘটনায় ওই আবাসিক হলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী জিয়াউল হক ও ইউনুছকে শুধুমাত্র শোকজ করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, মুচলেকা আর দুই নিরাপত্তাকর্মীকে শোকজ করে কি দায় এড়াতে পারে হল বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন?
বিশেষ করে এ ধরনের একটি গুরুতর অপরাধের পরও খাইরুলকে শুধুমাত্র মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেককেই বিস্মিত করেছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দিকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিজেদের হাতে নেই বলে দায় এড়াতে চাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, আমরা হাটহাজারী থানার সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছি। থানা পুলিশই তাদের আটক করে। পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এখানে আমাদের কোন হাত নেই।
ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেবে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দোষি প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বশির আহাম্মদের মুঠোফোনে বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।