‘ফেসবুকে মানুষ নেই, শুধু মানুষের ছায়া আছে। সেখানে হ্যান্ডশেক করার সুযোগ নেই। সে কারণে আমি ফেসবুকে নেই। মানুষকে একসঙ্গে রাখে প্রেম, ভালোবাসা।’
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে পাঠক আড্ডায় এসব কথা বলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এতে সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান মান্নান।
তিনি আরো বলেন, কাল ট্রেনে চট্টগ্রাম এসেছি। চারপাশে সাধারণ মানুষ। তাদের নৈকট্য জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ বলে মনে করি। মানুষ থেকে যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে একা হয়ে গেছে। আমাদের বড় জাতি হতে হলে মনকে বড় করতে হবে। মনকে বড় করার অন্যতম হাতিয়ার বই। বইকে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ছোট মন আর বড় জাতি একসঙ্গে হয় না।
পাঠক আড্ডায় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একা জন্মালেও আমার জীবন একা নয়। প্রত্যেকের এমন কিছু করা উচিত, যাতে মানুষ মৃত্যুর পর মানুষ কম-বেশি স্মরণ করে।
বইপড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বই কি কতগুলো ছবি, অক্ষরের সারি? সব বই কি পৃথিবীতে বাঁচে? কিছু কিছু বাঁচে। বই থেকেই উচ্চতর মনুষ্যত্ব চলে আসে পাঠকের মধ্যে। বই পড়া মানে নিজের চেয়ে বড় হওয়া। কেউ যদি ৫০০ বই পড়ে সে বিশাল নদী হয়ে যাবে। হাজার বই পড়লে সে সমুদ্র হয়ে যাবে।
কনে দেখার অভিজ্ঞতা বণর্না করে তিনি বলেন, আমি বিয়ের আগে স্ত্রীকে দেখিনি। না দেখে বিয়ে করেছি। আমি দেখলাম, দেখে বিয়ে করলে যা হবে, না দেখে বিয়ে করলেও তা-ই হবে! একসময় প্রথম দর্শনে প্রেম কথাটা খুব চালু ছিল। প্রেম যেমন সুখ দেয়, তেমনি বুকের রক্তও শোষণ করে।
এক মায়ের প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, কোনো বাচ্চাই কি বই পড়ায় আগ্রহী হচ্ছে না? বই পড়া অত সহজ নয়। পৃথিবীতে সবাই বই পড়তে পারে না। সবাই গান শুনতে পারে, নাচ দেখতে পারে, ফুটবল-ক্রিকেট খেলা দেখতে পারে। প্রতি ১০ জনের একজন বই পড়ে। বই পড়তে চিন্তাশক্তি, মননশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা লাগে।
এসময় তিনি নিজের মধ্যে যে চিন্তা- ভাবনা আছে তা দিয়ে ২০০টি বই লিখতে পারতেন বলে দুঃখ করে বলেন, সময়ের অভাবে লিখেছি মাত্র ৩৭টি।