রাতে কয়েক দফা সংঘর্ষের পর দুপুরে ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। সংঘর্ষে ছয় জন আহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে তিনজনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি রামদা।
বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ৩টার দিকে চবির সোহরাওয়ার্দী হল মোড়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এসময় উভয় পক্ষই দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়।
সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের প্রায় ২০টি কক্ষ ভাঙচুর করে বলে জানা গেছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং পাঁচটি রামদা উদ্ধার করে। এসময় তিন ছাত্রলীগ কর্মীকেও আটক করা হয়।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সমাজতত্ত্ব বিভাগের মেহেদি হাসান, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের ওসমান, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের ফয়সাল, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের ইমরান হাসান, ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি বিভাগের আব্দুস সাত্তার ও ইংরেজি বিভাগের রহমত উল্লাহ।
জানা যায়, বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী হলের পাশের একটি দোকানে সিএফসি ও বিজয় গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সিএফসি নেতা সোয়েবুর রহমান কনক বিজয় গ্রুপের কর্মী কাকনকে মারধর করে। পরবর্তীতে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে সেটি মীমাংসা হলেও রাত সাড়ে দশটার দিকে কনক ও আখলাছ সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে এলে বিজয়ের কর্মীরা তাদের মারধর করে। এ সময় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় আখলাছের মোটরসাইকেলে। পরে সিএফসির নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হল এবং বিজয় গ্রুপের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থান নিলে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দীতে অবস্থানরত বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ছয় ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। পরবর্তীতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়। এসময় তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় পাঁচটি রামদা। বর্তমানে উভয় গ্রুপই দেশি অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জয়নিউজকে জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএফসি গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি জামান নুর জয়নিউজকে বলেন, গতরাতে পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানোর পরে আজ বিজয় গ্রুপ আবারও আমাদের এক ছেলেকে মারধর করে। এতে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুষ্কৃতিকারীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। তবে তাদের যারা নিয়মিত ছাত্র আছে, আমরা তাদের দায়ভার নিব।
বিজয় গ্রুপের নেতা এইচ এম তারেকুল ইসলাম বলেন, গতকালের ঘটনায় আমরা সিনিয়ররা বসে সমাধানের চেষ্টা করলে আজ ছাত্রলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসী আমাদের কর্মীদের উপর হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সচল রাখতে আমাদের গ্রুপ সবসময় সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করে। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে সিএফসি। আমারা তাদের শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আখতারুজ্জামান জয়নিউজকে বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জেনেছি।
উল্লেখ্য, সংঘর্ষে লিপ্ত দুটি গ্রুপই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।