নতুন ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে গতি বেড়েছে। কনটেইনার খালাস হচ্ছে আগের চেয়ে কম সময়ে। কমেছে জাহাজ জটও। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর কেনার টাকা উঠে মুনাফা পেতে শুরু করবে চট্টগ্রাম বন্দর।
জানা যায়, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে চীন থেকে ৩৪৫ কোটি টাকায় ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনা হয়। আগে বন্দরে গড়ে ১৩ সারি কনটেইনার পণ্য ওঠানামার কাজ হতো। এখন ১৫ সারি পর্যন্ত কনটেইনার ওঠানামা করা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ১০টি গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে। আগে বন্দরে চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন ছিল। নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ছয়টি। এই দশটি ক্রেন একসঙ্গে কাজ করার কারণে দ্রুত কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে।
আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে নতুন ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের টাকা উঠে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুরানো গ্যান্ট্রিগুলো দিয়ে ১৩ সারি পর্যন্ত কনটেইনার ওঠানামার কাজ হতো। নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর আসার পর থেকে ১৫ সারি পর্যন্ত কনটেইনার ওঠানামা করা যাচ্ছে। তাই বন্দরে আসা বড় জাহাজগুলোও এখন অনেক কম সময়ের মধ্যে কনটেইনার লোড-আনলোড করতে পারছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হওয়ায় কনটেইনারের জট এখন অনেক কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা এর সুফল পেতে শুরু করেছেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটির ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেন’ দিয়ে দিনে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৪২৮ দশমিক ৩ ফিইইউ’স (ফরটি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিট) ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৫৮৭ টিইইউ’স (টোয়েন্টি ফিট ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে।
গ্যান্ট্রি ক্রেন ব্যবহারের চার্জ বাবদ ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রতি কনটেইনার থেকে আয় হয় ২২ দশমিক ৫ ইউএস ডলার। অন্যদিকে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রতি কনটেইনার থেকে আয় হয় ১৫ ইউএস ডলার।
বন্দর সূত্রে আরো জানা যায়, কনটেইনার হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৪২৮ দশমিক ৩ ফিইইউ’স কনটেইনার থেকে এক দিনে বাংলাদেশি মুদ্রায় আয় হয় ৮ লাখ ৯ হাজার ৪৮৭ টাকা এবং ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৫৮৭ টিইইউ’স কনটেইনার থেকে আয় হয় ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬২০ টাকা।
সবমিলিয়ে প্রতিটি গ্যান্ট্রি ক্রেন থেকে এক বছরে গড়ে ৫৬ কোটি টাকার উপর আয় হয়।
অন্যদিকে একটি ক্রেনের পিছনে মাসে মেরামত বাবদ খরচ হয় ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে এক বছরে চারটি ক্রেনের পিছনে মেরামত বাবদ খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া এক বছরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য খরচ হয় ৫ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। চারটি ক্রেনে এক বছরে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ১১ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
সব পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে লক্ষ্য করা যায়, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেনের আয় থেকে এক বছরের সব খরচ বাদ দেওয়ার পরও ৪৫ কোটি ৪০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫ টাকার মতো মুনাফা থাকে। একটি ক্রেনের হিসাব করলে যেখানে মুনাফা মিলেছে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ১৪ টাকা।
বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুনাফা অর্জনের এই ধারাবাহিকতা নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর ক্ষেত্রেও অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যেই নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর কেনার খরচ উঠে আসবে।
জানা যায়, ২০০৫ সালে বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডের জন্য চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন আনা হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত হয় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। কিন্তু যন্ত্রপাতি যুক্ত না হওয়ায় সনাতন পদ্ধতিতেই এই টার্মিনালে পণ্য ওঠানামা করা হতো। অবশেষে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার চুক্তি সই করে। চীনের সাংহাই জেনহুয়া হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড থেকে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৪৫ কোটি টাকায় সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের মাধ্যমে এসব ক্রেন আনা হয়।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, বন্দরে নতুন ছয়টি গ্যান্ট্রি যুক্ত হওয়ার ফলে আগের চেয়ে জাহাজ জট কমে গেছে। এখন একটি জাহাজের পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য দুটি করে গ্যান্ট্রি ক্রেন কাজ করছে। এতে জাহাজ থেকে দ্রুত পণ্য খালাস হওয়াতে জাহাজ মালিকদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। যে কারণে আমাদের এখন আর বাড়তি কোন খরচ গুণতে হচ্ছে না।