অবশেষে দূর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ও চট্টগ্রাম ওয়াসার মধ্যে দূরত্ব। এ দুই সেবা সংস্থার কাজের সমন্বয় করতে গঠন করা হয়েছে কমিটি। চার সদস্যের এ কমিটিতে রয়েছেন উভয় সংস্থার দু’জন কর্মকর্তা।
চসিকের রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় ওয়াসার কোনো প্রকল্প আছে কিনা তা আগেভাগেই অবহিত করবে কমিটি। আবার ওয়াসার কোন প্রকল্প কখন শুরু কিংবা শেষ হবে তাও মনিটরিং করবে কমিটি।
এদিকে ওয়াসার কাছে চসিকের পাওনা রয়েছে প্রায় ৪১ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ টাকা।পাওনা টাকার বিষয়েও কাজ করবে কমিটি।
কমিটিতে চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষক মো. সাইফুদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবু সালেহ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী মো. মাকসুদ ও আরিফুর রহমানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রোববার (৩ মার্চ) চসিক সম্মেলন কক্ষে রাস্তা কাটা বাবদ পাওনা আদায়ে চসিক ও ওয়াসার মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগামী সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে চসিক ও ওয়াসা সমন্বিত বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা এয়ারপোর্ট রোড, বায়েজিদ বোস্তামি রোড, হাটহাজারী রোডের মতো প্রধান সড়কসহ কয়েকটি রোডে উন্নয়ন কাজ শুরু করব। এসব সড়কে ওয়াসার কোনো প্রকল্প আছে কি-না সে বিষয়ে করপোরেশনকে অবহিত করা, যেসব সড়কে আমরা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবো সেখানে ওয়াসার কোনো প্রকল্প আছে কি-না, থাকলে কোন সময়ে তা শুরু হবে বা শেষ হতে পারে সার্বিক বিষয়ে একটি স্পষ্ট তথ্য পরিসংখ্যান তৈরি করবে কমিটি। কারণ রাস্তা কাটার কাজ থাকলে ওয়াসাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। আগামী বছর আর রাস্তা কাটা যাবে না।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, সেবা সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং টিএন্ডটি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ওয়াসার পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদেরকে তখন জরুরিভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইনে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রায়সময় রাস্তা কাটতে হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যও রাস্তা কাটতে হয়।
চসিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নগরে প্রায় ২৭ কিলোমিটার রাস্তা কাটতে হয়েছে। এক্ষেত্রে রাস্তা কাটা বাবদ ওয়াসার কাছে চসিকের পাওনা ছিল ৬০ কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার ২১৩ টাকা। ২০১৮ সালের ২৭ জুন ৫ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ৮৭৫ টাকা, একই বছরের ৪ অক্টোবর ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯৮ টাকা, ২২ অক্টোবর ৫ কোটি টাকা এবং চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ৫ কোটি টাকা চসিককে পরিশোধ করে ওয়াসা। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত ওয়াসা রাস্তা কাটা বাবদ চসিককে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৩ টাকা পরিশোধ করেছে। এরপরও রাস্তা কাটা বাবদ ওয়াসার কাছে আরো ৪১ কোটি ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ টাকা পাবে চসিক।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ জয়নিউজকে বলেন, নগরের প্রধান সড়কগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করবো। কয়েকদিনের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান হবে। ওই সড়কগুলোতে ওয়াসার প্রকল্প থাকলে তা মে মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা কাজ করার পর আর রাস্তা কাটা যাবে না। এসব নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিটিও করা হয়েছে। আশা করি, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে।