‘পরিবার থেকে দূরে থাকি। লাশগুলোই আমার বন্ধু-স্বজন। তাই মাঝে মাঝে পরিবারের কথা মনে পড়লে লাশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাই!’
অবলীলায় কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাশ পাহারাদার মো. হারিছ (৫২)। হাসপাতালের সবাই অবশ্য তাকে ডোম হারিছ বলে চেনে।
বুধবার (৬ মার্চ) সকালে হাসপাতালের লাশ ঘরে গিয়ে কথা হয় হারিছের সঙ্গে। জয়নিউজের সঙ্গে কথোপকথনে হারিছ জানান, হাসপাতালে লাশ পাহারা দিচ্ছেন প্রায় ১২ বছর। আগে হাসপাতালের ক্যান্টিনে কাজ করতেন। ওখান থেকে কাজ চলে যাওয়ার পর এখন লাশ পাহারা দেওয়ার কাজ করছেন। এ কাজের জন্য হাসপাতাল থেকে তাকে কোন টাকা দেওয়া হয় না। যে লাশগুলো পাহারা দিয়ে রাখেন লাশ নেওয়ার সময় তাদের আত্মীয়-স্বজনরা যে যতটুকু পারেন ততটুকু দেন। প্রতি লাশে মোটামুটি ২০০-৩০০ টাকা পেয়ে থাকেন। এভাবে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।
ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া থানার যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা হারিছ। পরিবার সেখানেই থাকে। স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়েই তার সংসার। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন।
রাতে লাশের সঙ্গে ঘুমান, ভয় করে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে হারিছ বলেন, প্রথম প্রথম ভয় করতো। এখন সয়ে গেছে। আগে তো লাশের ঘরে বাতিও ছিল না। এখন বাতি আছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
প্রতিদিন ৫-৬টি লাশের সঙ্গে ঘুমান হারিছ। লাশ ঘরে দুটি কক্ষ আছে। লাশ কম আসলে সামনের কক্ষে রাখা হয়। যদি বেশি হয় তাহলে ভেতরের কক্ষেও রাখা হয়। ভেতরে রাখলে লাশের সঙ্গেই ঘুমাতে হয় হারিছকে। মূলত কোন বেওয়ারিশ লাশ কিংবা অপমৃত্যুর লাশ হাসপাতালে আসলে সেগুলো এখানে রাখা হয়। এখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। যেসব লাশের ময়নাতদন্ত হয় না এখান থেকেই সেই লাশগুলো নিয়ে যান স্বজনরা। যতদিন লাশগুলো এখানে থাকে হারিছ তা দেখে রাখেন।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক সৌরভ জয়নিউজকে জানান, একদিন রাতে হারিছকে জানালা দিয়ে ডাকার সময় দেখি সে লাশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে! আত্মহত্যা করা এক গৃহবধূর লাশ ছিল সেটি। পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, লাশগুলো তার বন্ধুর মত। এদের নিয়েই তার সংসার, এদের সঙ্গেই তার বসবাস।
জয়নিউজ/রুবেল/জুলফিকার