বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে ব্লু ইকোনমি গড়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বন্দরনগরে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বুধবার (৬ মার্চ) বিকেল ৪টায় নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ২৭তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে সবসময় আন্তরিক উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। চট্টগ্রামের কথা চিন্তা না করলে লাইফলাইনে বাধা আসবে। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আমরা চাই ইজি অব ডুয়িং বিজনেস।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ের সিংহভাগ কর্মকাণ্ড এখন হচ্ছে চট্টগ্রামে। দেশের অধিকাংশ বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ও এ অঞ্চলে। কিন্তু প্রশাসনিক প্রধান অফিসগুলো ঢাকায়। তাই আমি মনে করি, চট্টগ্রামে অন্তত কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস হওয়া উচিত।
পর্যটন শিল্পে চট্টগ্রাম চ্যাম্পিয়ন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মিরসরাই ইকোনমিক জোন হয়ে গেলে চট্টগ্রাম আরো উন্নত হয়ে যাবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ টনের ওজনসীমা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ১৩ টন বহনে যদি রাস্তায় সমস্যা হয়, তাহলে আমার প্রশ্ন ওই রাস্তা ঠিকভাবে বানানো হলো না কেন? চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। আর সারাদেশে যদি ১৩ টনের ওপর যদি পণ্য পরিবহন হতে পারে তাহলে চট্টগ্রামে কেন হবে না?
তিনি আরো বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সব ব্যবসায়ীকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। যাতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বিনিয়োগ করে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সরকারের বিগত মেয়াদে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তা যদি বাস্তবায়ন হয় চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানীতে পরিণত হবে। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে সময় ও অর্থ, উভয়ের অপচয় হচ্ছে। তাই রাজধানীকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চার লাখ বর্গফুটের অধিক জায়গাজুড়ে আয়োজিত মেলায় এবার ২২টি প্রিমিয়ার গোল্ড প্যাভিলিয়ন, ২টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৮টি স্ট্যান্ডার্ড প্যাভিলিয়ন, ১৮০টি প্রিমিয়ার মেগা স্টল, ১০টি প্রিমিয়ার গোল্ড, ১০টি প্রিমিয়ার স্টল, ৬টি স্ট্যান্ডার্ড স্টল, ২টি রেস্টুরেন্ট, পার্টনার কান্ট্রি থাই জোন ও ৪টি আলাদা জোনসহ ৪৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলার পার্টনার কান্ট্রি হিসেবে রয়েছে থাইল্যান্ড। মেলায় ভারত, কোরিয়া ও ইরানের স্টলও রয়েছে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭ বছর হয়েছে। এ মেলায় স্থানীয় পণ্যগুলো প্রদর্শন করার মাধ্যমে সারাদেশে চাহিদা সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে চট্টগ্রামকে ঘিরে। তাই চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ব্যাংক থেকে শুরু করে সবকিছুর প্রধান অফিস ঢাকায়। কিছু প্রধান অফিস চট্টগ্রামে হলে বাণিজ্যিকভাবে উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দুঃখ ১৩ টন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ টনের ওপর পণ্য পরিবহন করতে না দেওয়ায় আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। চট্টগ্রাম কাস্টমস ভবনের আধুনিকায়ন করতে হবে। এছাড়া সেখানে জনবল বাড়ানোও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের শুধু একটি গেইটে আছে স্ক্যানিং মেশিন। বন্দরের প্রত্যেক গেইটে স্ক্যানিং মেশিন বসানো উচিত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ সেলিম, সহসভাপতি ও কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ জামাল আহমেদ, পরিচালক কামাল মোস্তাফা চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, জহুরুল আলম, ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সরোয়ার হাসান জামিল, অঞ্জন শেখর দাশ ও তরফদার মো. রুহুল আমিন।
মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা।