বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও বার্তা প্রকাশের মাধ্যমে হুমকিদাতা সেই রোহিঙ্গা যুবকের পরিচয় উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল শনিবার (৯ মার্চ) সারাদিন কক্সবাজারের উখিয়ার তিনটি রোহিঙ্গা শিবিরে হানা দিয়ে হুমকিদাতার পরিবারের সদস্যদের সনাক্ত করেন।
রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, যুবক আবদুল খালেক মালয়েশিয়ায় বসবাস করে আসছে বহু বছর ধরে। মালয়েশিয়া থেকেই হুমকিদাতা আবদুল খালেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছাড়ে বলে স্বজনরা নিশ্চিত করেছে পুলিশকে।
ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গেলে এনিয়ে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। হুমকিদাতা রোহিঙ্গা দামি জামা কাপড় এবং অলংকারে শোভিত অবস্থায় একটি গাড়িতে বসে প্রধানমন্ত্রীকে আরাকানি রোহিঙ্গা ভাষায় ‘পরিণতি খারাপ হবে’ বলে হুমকি দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের যত উঁচু দালানকোঠা স্থাপনা আছে, সবই ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে বলেও জানায় এই যুবক।
ভিডিও বার্তাটি ভাইরাল হবার পরেই কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া শনিবার সকালে একদল পুলিশ নিয়ে ছুটে যান রোহিঙ্গা শিবিরে।
পরিদর্শক মানস বড়ুয়া জয়নিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে এক ‘কুলাঙ্গার’ রোহিঙ্গা যুবক।
ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আরো জানান, তিনি তিনটি শিবিরে গিয়ে খালেকের ৬ জন ভাই ও এক মায়ের সন্ধান পেয়েছেন। ২০১৭ সালে তারা মন্ডুর বলিবাজার এলাকা থেকে পালিয়ে শিবিরে আশ্রয় নেন। খালেকের বাবা প্রয়াত আবদুস সালাম একে একে ৪ টি বিয়ে করেছেন। ৬ ভাই তাদের এক মাকে নিয়ে বর্তমানে তিনটি শিবিরে রয়েছেন। তিনি আরো জানান, প্রয়াত রোহিঙ্গা আবদুস সালামের ৪ জন স্ত্রীর রয়েছে মোট ২৭ জন ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্যে এক কন্যার বিয়ে হয়েছে সৌদি আরবে। খালেকের ভাইদের বালুখালী শিবিরে রয়েছে কম্পিউটার ও স্বর্ণের দোকান।
ডিবি পুলিশ খালেকের এক ভাই জাহাঙ্গীরকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এমনকি তাদের মায়ের সাথেও কথা বলেছেন অনেকক্ষণ। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন-হয়তোবা খালেক মদ্যপান করেই এমন সব হুমকি দিয়ে থাকতে পারেন। তারা এমনও সন্দেহ করছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা খালেক কোন খারাপ গোষ্টির সাহচর্য পেয়েও এমন সব কাজ করে থাকতে পারেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এ বিষয়ে জয়নিউজকে জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়া ভিডিওটির ব্যাপারে পুলিশ রোহিঙ্গা শিবিরে ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে সনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছে হুমকিদাতাকে। হুমকিদাতা রোহিঙ্গা যুবকের নাম আবদুল খালেক (৩২)। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মন্ডু থানার বলিবাজার ধুমরাই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুস সালামের ছেলে খালেক প্রায় এক দশক সময় ধরে রয়েছে মালয়েশিয়ায়।
পুলিশ হুমকিদাতা রোহিঙ্গা যুবক খালেকের বিষয়ে নানা তথ্যের সন্ধান করছে। মালয়েশিয়ায় তার অবস্থান নিয়ে জানার কাজও শুরু করেছে পুলিশ। হুমকিদাতা রোহিঙ্গা যুবক কেন এবং কি কারণে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছে তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই যুবক কোনো জঙ্গি গোষ্ঠির সঙ্গে জড়িত রয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে এদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের যখন ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর ঢল নামে তখন এদেশের সরকার, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এবং এদেশবাসী মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
এমনকি যখন কোনো দেশ এবং এনজিওরা ছিলনা তখন এদেশের মানবিক মানুষগুলোই নিজেরা না খেয়ে খাবার নিয়ে মুখে তুলে দিয়েছিলেন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের। আর এমন রোহিঙ্গারাই কি-না বাংলাদেশের সরকার প্রধান ও সরকারকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশীরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে।