রোজিনা আক্তার (৩৩) সাতকানিয়ার আমিলাইশের বাসিন্দা। ২০০৪ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সৌদিপ্রবাসী মো. বেলালের (৪০) সঙ্গে। বছর ঘুরতেই রোজিনার কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে রোজিনার উপর শুরু হয় নানারকম নির্যাতন। কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কথা শুনতে হত প্রতিনিয়ত। একপর্যায়ে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক না না পেয়ে ২০০৬ সালে রোজিনাকে ডিভোর্স দেন বেলাল। ডিভোর্স মেনে নিলেও স্বামীর কাছে মেয়ের ভরণপোষণ দাবি করেন রোজিনা। ভরণপোষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বেলাল। তবে সেটি ছিল শুধু প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ।
এরপর ভরণপোষণ দেওয়ার কথা বলে নানা তাল-বাহানা শুরু করেন বেলাল। বাধ্য হয়ে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম পারিবারিক আদালতে মেয়ের ভরণপোষণের দাবিতে স্বামী বেলালের বিরুদ্ধে মামলা করেন রোজিনা। মামলা করায় রোজিনাকে নানা ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন বেলাল। তবে দমে যাননি রোজিনা। এখনো মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু রোজিনা নন, চট্টগ্রাম পারিবারিক আদালতে রোজিনার মতো অনেক নারীই নিজের ও সন্তানের ভরণপোষণের জন্য মামলা করছেন। এতে সুফল পেলেও মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকেই হতাশ। ভুক্তভোগীদের দাবি, মামলাগুলো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করা হোক।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম পারিবারিক আদালতে দুইটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। চট্টগ্রাম পারিবারিক আদালত-১ এবং আদালত-২। আদালত দু’টিতে বিভিন্ন মামলার মধ্যে এখন ভরণপোষণের মামলাই সর্বাধিক। দৈনিক শতাধিক মামলা দায়ের হচ্ছে এ আদালতে। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই নারী এবং বিবাহ বিচ্ছেদের পর নিজের ও সন্তানের ভরণপোষণের জন্য মামলা করছেন। আবার বৃদ্ধবয়সে নিজের ভরণপোষণের জন্য ছেলের বিরুদ্ধেও মামলা আছে অনেক। মামলার রায়ের ফলে অনেক ছেলে মা-বাবার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
মামলায় জেতা এমনই একজন পিতা আব্দুল গফুর (৬০)। বিয়ের পর ছেলে সাইফুল মা-বাবার ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানান। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকা শুরু করেন। অসহায় বৃদ্ধ মা-বাবা কোনো উপায় না দেখে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। মামলার রায়ে আদালত ছেলে সাইফুলকে মা-বাবার ভরণপোষণের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী মো. শওকত হোসেন এরশাদ জয়নিউজকে বলেন, পারিবারিক আদালতে আগের তুলনায় এ ধরনের মামলা অনেক বেড়েছে।
ভুক্তভোগীরা এখানে মামলা করে ফলও পাচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে মামলার বিবাদিরা বাদি ও আইনজীবীকে নানা হুমকি-ধমকিও দিয়ে থাকেন। তারপরও আমরা মামলাগুলো পরিচালনা করি। কারণ ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে আসেন। তাই তাদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।
মামলার দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ভরণপোষণের মামলা অনেক বেড়েছে। তাই কিছুটা সময় লাগে।