কালের আবর্তে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আশা-ভরসার প্রতীক। তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছিল দেশ। স্বপ্ন দেখেছিল বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত সেই নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। দিনটি বাংলাদেশে শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের কোল আলো করে জন্মেছিলেন খোকা নামের এক শিশু। অজপাড়াগাঁয়ের সেই খোকা পরবর্তী সময়ে হয়ে উঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। যিনি বাঙালি জাতির কাছে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমান নামে।
কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। সবসময় ছিলেন অধিকার আদায়ে অগ্রসৈনিক। ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জের মিশনারি স্কুলে। সেখানেই ছিল বঙ্গবন্ধুর বাবার কর্মস্থল। একদিন সেই স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। শেখ মুজিব তাঁদের দুজনের কাছে স্কুলের উন্নয়নের জন্যে জোর দাবি জানান। স্কুলজীবনে থাকতেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বগুণ তাই প্রকাশিত হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার সব আন্দোলনের সূতিকাগার। ভাষা আন্দোলনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ১৯৫৮-এর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে উঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।
৫৪ বছরের জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু দমে যাননি কখনো। জেল থেকে ফিরে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দেশমাতৃকার কাজে। আপোষহীন এই নেতা তাই কেবল বাংলাদেশের নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির দিশারি।
বঙ্গবন্ধুর বাগ্মিতা নিয়ে সারাবিশ্বে চলছে বহু গবেষণা। তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছিল না কোনো লিখিত কপি। অথচ তাঁর প্রত্যেকটি শব্দই ছিল সুচিন্তিত, স্বাধীনতার শপথে দীপ্ত। তাঁর দীপ্তকণ্ঠ অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদ, প্রতিরোধের হাতিয়ার।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত মুজিব দেশে ফেরেন। ঘোষণা দেন সোনার বাংলাদেশ গঠনের।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে নেমে আসে এক কালো দিন। ওই দিন নিজ বাসভবনে ঘাতকের গুলিতে নিহত হন স্বপরিবারে। তবে বেঁচে যান বিদেশে থাকা তাঁর দুই মেয়ে।