প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, উন্নত জীবন পায়, সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সে কারণেই আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
রোববার (১৭ মার্চ) সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আজকের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙিন’। আমি এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বলতে চাই, আমরা জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকী পালন করছি। আগামী বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২০২০ থেকে ২০২১ সালকে আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি।
অভিভাবক ও শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যে শিক্ষা গ্রহণ করছে, আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে শিশুদেরকে, বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাদের ভাষায় বই দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই ও বৃত্তি দিচ্ছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তির টাকা আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মায়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। যেন মা তার শিশুকে স্কুলে পাঠায়। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। যাতে ঝরে পড়া বন্ধ হয় এবং তারা পড়াশোনা শিখতে পারে। মেয়েদের জন্যও আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের আধুনিক প্রযুক্তি, কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের শিশুদের সাথে যাতে আধুনিক প্রযুক্তির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাছাড়া আমরা প্রতিটি জেলায় একটি করে মোট ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ সারা দেশে ২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছি। যাতে প্রযুক্তি শিক্ষাতে আমাদের শিশুরা আরো পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। যে দেশে প্রতিটি শিশু তার জীবন উন্নত করতে পারবে, শিক্ষা-দীক্ষা-চিকিৎসা সবদিক থেকে উন্নত জীবন পাবে। এ ছিল তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু সে কাজটাও তিনি করে যেতে পারলেন না। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের বুলেটের আঘাতে জাতির পিতাকে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। আমার মা, আমার ছোট তিন ভাই, আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসেরকে হত্যা করা হয়। আমার তিন ফুফুর বাড়িতেও আক্রমণ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতেই তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে যাই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছে সব সম্ভবনা, স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
ভাষণের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, ‘এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের মালেকা একাডেমির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু আরাফত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার।