চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রতিবছর শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি শাটল ট্রেনের সংখ্যা কিংবা বগি। তাই যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি প্রতিদিনের চিত্র।
যাতায়াতের এ ভোগান্তি দূর করতে এবার অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এজন্য শাটল ট্রেনগুলোতে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। এসব পোস্টারে আহ্বান জানানো হয়েছে- অর্ধেক পথ অতিক্রমের পর দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীকে সিট ছেড়ে দেওয়ার।
‘শাটলে অর্ধেক পথ বসে, অর্ধেক পথ দাঁড়িয়ে যাই, সম্প্রীতি বাড়াই। আমরা চবিয়ান ভাই ভাই, এই পরিবর্তনটি চাই’ উল্লেখ রয়েছে পোস্টারটিতে। তবে এর উদ্যোক্তা কে বা কারা কিছুই উল্লেখ নেই পোস্টারে।
চবিতে ছাত্রপরিবহন সংকট দীর্ঘদিনের। আবাসন সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ থাকে নগরে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান জেলা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে। এ অবস্থায় ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নগর থেকে শাটল ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। ৯টি বগি নিয়ে দুটি শাটল এবং একটি ডেমু ট্রেন ৯ বার যাওয়া আসা করে এই রুটে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকেই নানা অজুহাতে ৭টি থেকে ৮টি করে বগি দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ২০১৮ সালের বাজেট অধিবেশনে উল্লেখ করা হয়েছিল. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৭ হাজার ৮৩৯ জন। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে এখন শিক্ষার্থী ৩২ হাজারেরও বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শাটল ও এর বগি বাড়ানো না হলেও বাড়ছে শিক্ষার্থীদের চাপ। সিট না পেয়ে অনেককেই এই দীর্ঘপথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাড়ি দিতে হয়। এর প্রতিকারে এমন উদ্যোগ খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে।
পোস্টারটিতে উদ্যোগ গ্রহণকারীদের নাম না থাকলেও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে এই প্রতিবেদক খোঁজ পায় তাদের। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের হাসান মেহেদি, নেয়ামত উল্লাহ, তামজিদুল ইসলাম অভিসহ বেশ কয়েকজন শাটলে এই পোস্টারগুলো টাঙিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে হাসান মেহেদি জয়নিউজকে জানান, শাটলে সিট ধরার মতো অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখে মনে হয়েছিল এটি অমানবিক এবং চবির শিক্ষার্থীদের মাঝে ঐক্যের অভাব। সেই থেকেই একটা ভাবনা আসে এরকম উদ্যোগ নিলে ঐক্যটা বাড়বে। পাশাপাশি দুর্ভোগও লাঘব হবে কিছুটা। গতবছর বন্ধুরা মিলে প্রায় ৬০০ পোস্টার লাগাই। কিন্তু কে বা কারা সেগুলো ছিঁড়ে দেয়। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এই ইস্যুটা নিয়ে আলোচনা দেখে বুঝলাম এটি এখনও সম্ভব। তাই আবারও পোস্টার লাগিয়েছি। গতবছর এবং এবারও বেশ কয়েকজন বন্ধু এতে আমাকে সাহায্য করেছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত শাটল ও বগির ফলে চালু হয় সিট ধরার সংস্কৃতি। এতে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। একপর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগ দীর্ঘদিনের বগি রাজনীতির ইতি টানলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। আর গত বছরের আগস্টে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে একের অধিক সিট ধরা সংস্কৃতি বন্ধ হয়। ১৩ আগস্ট ছাত্রলীগের একটি পক্ষের অনুমোদনে ১৪ সদস্যের কমিটি নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘শাটল শৃঙ্খলা কমিটি’। সিট ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সহায়তা করে এই কমিটি। কিন্তু সিট না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর ভোগান্তি থেকেই যায়। তাই এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে ছাত্রলীগও।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সমর্থিত শাটল শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা জয়নিউজকে বলেন, শাটলের বগি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মসূচি পালন করলেও তা সফল হয়নি। কারণ শিক্ষার্থীর তুলনায় শাটলের সিট কম। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে শাটল শৃঙ্খলা কমিটি এবং শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। চবি ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ ছাত্রদের পাশে আছে। এমন উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের সুবিধাও হবে, সম্প্রীতিও বাড়বে।