পবিত্র হজ পালন করতে দেশ ছাড়ার আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য বিকেল ৫টার মধ্যেই সরিয়ে ফেলা হবে।
তবে এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতটা হয় তা দেখতে মুখিয়ে ছিল নগরবাসী। কারণ একেতো মেয়র চট্টগ্রামে থাকবেন না, তারওপর নগরের অনেক এলাকার বাসিন্দা নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দেন না।
মেয়র চট্টগ্রামে না থাকলেও ‘বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম’ তদারকিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকেই মুঠোফোনে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছেন তিনি। আবার চসিকের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারাও তৎপর ছিলেন মেয়রের প্রতিশ্রুতি পালনের।
সবমিলিয়ে চমকই দেখিয়েছে চসিক। কোরবানীর দিন নগরবাসীকে চসিক উপহার দিয়েছে পরিচ্ছন্ন এক নগর। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যেই অপসারণ করা হয় নগরের প্রতিটি এলাকার বর্জ্য।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন জয়নিউজকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু হয়। সকালে যেসব পশু কোরবানি হয়েছে তার ৬০ ভাগ বর্জ্য আমরা দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার করে ফেলি। দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে যেসব পশু কোরবানি হয়েছে সেগুলোর বর্জ্য অপসারণে সময় লেগেছে। তবে বিকাল ৫টার মধ্যে পুরো নগরের বর্জ্য অপসারণে আমরা সক্ষম হয়েছি। নগরবাসীকে দেওয়া মেয়রের প্রতিশ্রুতি আমরা শতভাগ রক্ষা করেছি।
এবার পশু কোরবানির জন্য চসিক নগরের ৩৭০টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। তবে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করেননি অনেক নগরবাসী। নগরের অসংখ্য বাসিন্দা নিজ বাড়ির সামনে, অলি-গলিতে কিংবা ফ্ল্যাট বাড়ির গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে পশু কোরবানি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম চারটি জোনে ভাগ করা হয়। চার জোনে চারজন কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কার্যক্রম তদারকির জন্য। এছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও নিজ নিজ এলাকায় মনিটরিং করেছেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। সবমিলিয়ে চসিকের প্রায় ৫ হাজার কর্মী ২৪৮টি গাড়ি নিয়ে নগরের বর্জ্য অপসারণের কাজ করেছে।
নগরের নন্দনকাননের গোলাপ সিং লেইনের বাসিন্দা ভূপেশ চন্দ্র দেবনাথ জয়নিউজকে বলেন, আমাদের গলিতে আগে একটি খোলা ডাস্টবিন ছিল। তবে চসিকের ‘ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণ’ কর্মসূচির পর স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী ডাস্টবিনটি তুলে দেন। কিন্তু ডাস্টবিনটি তুলে দেওয়ার পরও অসচেতন কিছু মানুষ দিন-রাত ওই স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে থাকে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের পাশাপাশি পথচারীদের। কোরবানির দিন স্থানটির অবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ছিল স্থানীয় সচেতন মহল। কিন্তু দুপুরে ঘর থেকে বেরিয়ে আমি চমকে গেলাম! ওই স্থানটিতে পশুর কোনো আবর্জনাতো দূরে থাকুক এতটুকু ময়লা পর্যন্ত নেই! সামান্য একটি গলির চিত্র যদি এভাবে পাল্টে যায় তাহলে অনুমান করা যায় পুরো শহরের চিত্রটা কেমন। মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ সুন্দর একটি পরিবেশ উপহার দেওয়ার জন্য।
এদিকে ঈদের দিন বিকেল থেকেই ফাঁকা সড়কে হাঁটতে বের হন অনেক নগরবাসী। আবার অনেকে পরিবার নিয়ে ছুটে যান নগরের বিনোদনকেন্দ্রে। নেভাল টু নামে পরিচিত অভিয়মিত্র ঘাটে ঈদের দিনও ছিল মানুষের মেলা। সিদুল পাল নামে দিদার মার্কেটের এক বাসিন্দা বলেন, অফিস ছুটি, তাই সময় কাটাতে বন্ধুদের সঙ্গে এখানে চলে এসেছি। এবার অবশ্য আমরা একটু ভিন্নভাবে এই পর্যটন স্পটে এসেছি। একেতো সড়ক ফাঁকা, তারওপর সড়কে কোনো ময়লা-আবর্জনা কিংবা দুর্গন্ধ নেই। তাই দিদার মার্কেট থেকে হেঁটে হেঁটেই এখানে চলে এসেছি। হাঁটার সময় মনে হয়েছে প্রতিটি দিন যদি এমন হতো!
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, আমরা কাউন্সিলররা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণে সচেষ্ট ছিলাম। আমার ওয়ার্ডে দুপুর ২টার মধ্যেই সব ধরনের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। পানি দিয়ে রাস্তা ধুয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঈদের দিন দুপুর ৩টার দিকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে পরিদর্শনে বের হন কাউন্সিলরসহ চসিক কর্মকর্তারা। পরিদর্শনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, মেয়রের একান্ত সহকারী রায়হান ইউসুফ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান সিদ্দিক, নির্বাহী প্রকৌশলী সুদীপ বসাক ও প্রকৌশলী জয় সেন।