কোরবান এলেই হিড়িক পড়ে চামড়া ব্যবসার। মূল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি এতে জড়িত হন অসংখ্য মৌসুমি ব্যবসায়ী। বিশেষ করে পাড়া-মহল্লার অজস্র তরুণ কোরবানির দিন নেমে পড়েন চামড়া সংগ্রহে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করে অল্প লাভে দ্রুত বিক্রি করে দিয়েছেন তারা বাজিমাত করেছেন। আর যারা বাড়তি লাভের আশায় সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করেননি তাদের মাথায় হাত পড়েছে।
প্রতিবছর কোরবান এলেই চামড়া ব্যবসা করেন নগরের নন্দনকাননের মো. হাসান ও মো. মাকসুদ। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। হাসান ও মাকসুদ জয়নিউজকে জানান, সকাল থেকেই আমরা নিজ এলাকার পাশাপাশি আশপাশের এলাকা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করি। সবমিলিয়ে আমরা ৫২টি চামড়া সংগ্রহ করি। যেগুলোর গড় দাম পড়ে ৩৫০ টাকা। দুপুর ১টার মধ্যেই আমরা এক ট্যানারি ব্যবসায়ীর কাছে সব চামড়া বিক্রি করে ফেলি। গড়ে প্রতিটি চামড়ার দাম পেয়েছি ৫০০ টাকা।
এদিকে হাসান-মাকসুদ লাভবান হলেও কপাল পুড়েছে অনেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর। এদের মধ্যে অনেকের কপাল পুড়েছে বাড়তি লাভ করার চিন্তার কারণে। এখনো নগরের অনেক অলি-গলির মুখে চামড়া নিয়ে ক্রেতার প্রতীক্ষায় রয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। যারা এখন শঙ্কিত লোকসানের চিন্তায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রাম থেকে ৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে ঈদের দিনই নগর থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চামড়া সংগ্রহ করা হয়। বিবিরহাট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, আসাদগঞ্জসহ নগরের বিভিন্ন চামড়ার আড়তে এখন আড়াই লাখ চামড়া মজুদ আছে। এসব চামড়া বিক্রি হওয়ার পর গ্রাম থেকে বাকি আড়াই লাখ চামড়া নগরে আনা হবে। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামে লবণ দিয়ে সংরক্ষিত রয়েছে চামড়াগুলো।
এর আগে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ সংক্রান্ত এক বৈঠক গত ৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া (ঢাকায়) ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা; খাসি ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরি ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
গতবছরও ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর খাসি ও ভেড়ার ক্ষেত্রে দেশের সর্বত্র প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরি ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
এদিকে গতবারের চেয়ে দাম কম থাকায় এবার আড়তদারদের খুব বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এ অবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে এখনো চামড়া বিক্রি করতে না পারা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী জয়নিউজকে জানান, চামড়া শিল্প এখন পুরোপুরি ঢাকাকেন্দ্রিক। চট্টগ্রামের সংগৃহীত চামড়ার ৮০ শতাংশই বিক্রি করতে হবে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা তখনই লাভবান হবেন যখন ঢাকার ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া বাড়তি দাম দিয়ে কিনবেন।
কয়েকজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান, চামড়ার ব্যবসা করতে গিয়ে খুব বিপদে আছি। কারণ চামড়া সময়মত বিক্রি করতে না পারায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। আড়তদাররা যে দামে চামড়া কিনতে চাইছে তাতে লাভতো দূরে থাকুক আসলই আসবে না।