নগরের প্রধান সড়কগুলোর পাশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যা । আর এসব ভবনে গড়ে উঠছে মার্কেট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি।
এসব ভবন নির্মাণের আগে নকশার অনুমোদন নিচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কাছ থেকে। অনুমোদন নেওয়ার সময় নকশায় পার্কিং স্পেস দেখানো হলেও সেটি রাখা হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ভবনগুলোতে যেমন বাড়ছে মানুষের আনাগোনা, তেমনি বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তবে ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ে আলাদা স্থান না থাকায় এর সামনের সড়ক বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের দখলে থাকছে। নগরে যানজটের তীব্রতার এটি একটি কারণ।
জানা গেছে, যে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণের সময় গাড়ি পার্কিংয়ের স্পেস রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম এখন কেউ মানছে না। ব্যস্ততম সড়কের পাশের বহুতল ভবন ও মার্কেটে পার্কিংয়ের স্থান না থাকা নগরে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ট্রাফিক পুলিশ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুবাস বডুয়া জয়নিউজকে বলেন, শহরের প্রধান সড়কের পাশের বহুতল ভবনে অবস্থিত বিভিন্ন অফিস ও মার্কেটগুলোয় প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা, ইজিবাইকে চেপে প্রতিদিন প্রচুর মানুষের আনাগোনা। পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় এ যানবাহন সড়কের উপর যত্রতত্র রাখা হয়। এটা যানজট সৃষ্টি করে।
চউকের অথরাইজ অফিসার ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর হাসান জয়নিউজকে বলেন, ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী কোনো ভবনে যানবাহনের আসা-যাওয়া ও পার্কিংয়ের জন্য মূল সড়ক থেকে নূন্যতম তিন মিটার ব্যবধানে ব্যবস্থা রাখতে হয়। ভবনের আয়তন ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুপাতে পার্কিংয়ের স্থান রাখার নিয়ম রয়েছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, বিপণি বিতান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মিলনায়তন, গুদাম, কারখানায় কমপক্ষে একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১১ দশমিক ৫ বর্গমিটার অর্থাৎ ১২৩ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে। তবে চট্টগ্রাম শহরের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই নেই।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে । পাশাপাশি পুলিশ মামলা হলে সচেতনতা বাড়বে।
নগরের জনবহুল ও ব্যস্ততম বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এলোমেলোভাবে এসব ভবনের সামনে গাড়ি দাঁড় করানো হয়। ফলে প্রতিনিয়ত এসব এলাকায় যানজট হচ্ছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ হাজারি জয়নিউজকে বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চউকের সহযোগিতা পেলে নগরবাসীকে আরো সুন্দরভাবে ট্রাফিক সেবা দিতে পারতাম ।
এ ব্যাপারে চসিক নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম জয়নিউজকে বলেন, অপ্রশস্ত রাস্তা, পার্কিং স্পেস না থাকা, লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও ফুটপাত দখলের কারণে মূলত যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নগরের অনুমোদনবিহীন ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল বন্ধ, ফুটপাত দখলমুক্তের পাশাপাশি সড়ক বিভাজক নির্মাণের কারণে যানজট কমে আসছে।
তবে আবাসিক- বাণিজ্যিক ভবন ও মার্কেটের সামনে পার্কিং স্পেস না থাকায় যানজট কমানো যাচ্ছে না, যোগ করেন তিনি।