৬ পুলিশের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছেন পতেঙ্গার নুরুল আবছার। তবে অভিযুক্ত পুলিশদের দাবি, নুরুল আবছার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিদেশি মদসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার রয়েছে অঢেল সম্পদ।
নুরুল আবছার, নাকি ৬ পুলিশ, প্রকৃত দোষি কে? নিজস্ব প্রতিবেদক রুবেল দাশের প্রতিবেদনে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে জয়নিউজ-
গত ২৫ মার্চ ছয় পুলিশসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন পতেঙ্গার নুরুল আবছার নামে এক ব্যক্তি।
তার অভিযোগ ছিল, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার কাছে অভিযুক্তরা ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছেন।
তবে মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, আবছার পতেঙ্গা এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাকে বিভিন্ন সময় মাদকসহ বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এ মামলা দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে মামলায় বাদী নুরুল আবছার অভিযোগ করেন, তাকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পুলিশ। পরবর্তীতে আরো ১৫ লাখ টাকা দাবি করে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের ৩ জুন সকাল সাড়ে ছয়টায় পতেঙ্গা থানার নেভাল রোডের চাইনিজ ঘাটের পাশে রিভারাইন রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ৪০ বোতল বিদেশি মদসহ নুরুল আবছারকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। মামলা কিছুদিন চলার পর আবছার জামিনে বের হয়ে এসে আবারো মাদক ব্যবসা চালাতে থাকেন।
২০১৮ সালের ২ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে পতেঙ্গা বিজয়নগর শহীদ মিনারের সামনে গাভী ইলিয়াছ নামে এক ব্যক্তিকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর সময় আদিল নামে এক যুবককে গণপিটুনি দেয় জনতা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে সে বলে, নুরুল আবছারের কাছ থেকে সে ইয়াবাগুলো সংগ্রহ করেছে।
জানা যায়, নুরুল আবছার পতেঙ্গা এলাকার মৃত বদিউর রহমানের ছেলে। পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার মাদকবিরোধী অভিযানের তালিকাভুক্ত আসামি তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, অতীতে পেশায় পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাটের মাঝি হিসেবে কাজ করলেও নিষিদ্ধ ইয়াবা, বিদেশি মদ, চোরাই তেল, বিয়ার, গাঁজা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান করে কয়েক বছরেই কোটিপতি বনে যান আবছার। তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেন তার বোন জামাই টেস্টার ইলিয়াছ, ডিস রাজু ও আদিল। ইয়াবা ব্যবসা করে পতেঙ্গায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে প্রাসাদসম বাড়ি বানিয়েছেন আবছার।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া নুরুল আবছার বেশ কয়েকজন নেতাকে ‘ম্যানেজ’ করে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান করে নেন। এরপর ক্ষমতাসীন দলের পদবী ব্যবহার করে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে।
পরে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তথ্য গোপন ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স ইলিয়াছ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও এলাকাবাসী মো. ইলিয়াছ জয়নিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগেও আবছার চাইনিজ ঘাটে মাঝির কাজ করতো। ইয়াবা ব্যবসা করে সে এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকার বাড়ি বানিয়েছে সে। এলাকার প্রতিটি ঘরে সে মাদক ছড়িয়ে দিয়েছে। পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি (বর্তমানে পাঁচলাইশ থানার ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে আবছার ওসি কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অবিলম্বে আমরা এ ইয়াবা ব্যবসায়ীর হাত থেকে পরিত্রাণ চাই।
জানতে চাইলে নুরুল আবছার জয়নিউজকে বলেন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি আবুল কাশেম আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। তখন আমি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচাই। পরে আবারো ১৫ লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন তিনি। টাকা না দেওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে আদালতে চালান দেন। জামিনে বের হওয়ার পর আমাকে আবারো টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া জয়নিউজকে বলেন, নুরুল আবছার পতেঙ্গার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। আমি পতেঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন বিদেশি মদসহ তাকে একবার গ্রেপ্তার করেছিলাম। তার বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে বাঁচার জন্যই সে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আশা করি আদালতের অনুসন্ধানে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
নুরুল আবছারের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, টাকা নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এগুলো সাজানো গল্প। আদালত এ বিষয়ে অনুসন্ধান করবে।
উল্লেখ, গত সোমবার (২৫ মার্চ) মো. নুরুল আবছার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত নয়জন হলেন পতেঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বর্তমানে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া, পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক প্রণয় প্রকাশ, উপ-পরিদর্শক আবদুল মোমিন, সহকারী উপ-পরিদর্শক তরুণ কান্তি শর্মা, সহকারী উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক মিহির কান্তি, পুলিশের সোর্স মো. ইলিয়াছ, মো. জসিম এবং মো. নুরুল হুদা।