বাংলাদেশ রেলওয়েতে সেবার মান বেড়েছে । আমলাতন্ত্রিক জটিলতার অবসানে রেলওয়ের সেবার মান বাড়লেও, গতি কমেছে দ্রুতগামী ট্রেনের । সরেজমিনে রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও কয়েকটি রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া থেকে ব্রডগেজ ট্রেনের কোচ আমদানির পর রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এগুলো ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। অথচ লাইনের সক্ষমতা নেই বলে পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজ ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার থেকে ৮৫ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। পুরো পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের যাতায়াত দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়েছে। বিপুল টাকা ঢেলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনের যাতায়াত ৪৫ মিনিট বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ২০০০ সালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেত পাঁচ ঘণ্টায়। মাঝে কয়েক বছর ওই ট্রেনের নির্ধারিত সময় ছয় ঘণ্টা করা হয়। গতবছর তা করা হয় ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিট। এবার ৪৫ মিনিট সময় বৃদ্ধি করলে এই ট্রেনের যাত্রার সময়ও বাড়বে। অর্থাৎ, প্রায় ১৯ বছর পর রেলের গতি না বেড়ে কমছে। যা অনেকের কাছেই অবাক করার মতো খবর।
সূত্র জানিয়েছে, রেললাইন, কোচ, ইঞ্জিন, স্টেশন, সংকেত ব্যবস্থা সব ঠিক থাকলে ট্রেন সময় মেনে চলে। কিন্তু দেখা গেছে, একটি ঠিক থাকলে আরেকটি ঠিক থাকছে না। প্রতিটি ট্রেনের যাত্রার স্থান থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় নির্ধারিত আছে। এর ব্যত্যয় হলেই সময় মানা হয়নি বলে ধরা হয়। গতি কমে যাওয়ার কারণে সময়ানুবর্তিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যাত্রার সময় বাড়িয়ে তা সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নুরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলে গেছে রেল মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে রেল মন্ত্রণালয়কে ঘীরে দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে থাকা তদবিরবাজরা উধাও হয়ে গেছে। আগের মতো এখন আর নেই দালালদের আনাগোনা। নেই নির্ধারিত একটি এলাকার লোকের অহেতুক হস্তক্ষেপ। সবমিলিয়ে নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলের সুদিন ফিরে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নুরুল ইসলাম সুজন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে যাতে বিক্রি না হয় সেজন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করেন। এজন্য আন্তঃনগর সকল ট্রেনের টিকিট ক্রয়ে এনআইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
এর ফলে বদলে যেতে শুরু করেছে রেলসেবা। তবে ট্রেনের গতি কমে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন খোদ রেলওয়ের কর্তাব্যক্তিরা।
জানা গেছে, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু, সিল্কসিটি, খুলনাগামী সুন্দরবন, দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস, চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, খুলনা-চিলাহাটির সীমান্ত এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রেলপথের উপবন, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের উদয়ন এক্সপ্রেস, ঢাকা-নেত্রকোনার হাওর এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জগামী অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস ট্রেনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি আখাউড়া-লাকসাম মিশ্র গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের পরিচালক ডি এন মজুমদার রেলভবনে একটি চিঠি দেন। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে প্রতিটি ট্রেন চলাচলের সময় ৪৫ মিনিট বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সময়সীমা বাড়ানোর কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কিছু কিছু স্থানে ট্রেন চলাচলে ডাইভারশন (বিকল্প পথ) করতে হবে। এজন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে ঘণ্টায় ৭২ থেকে ৭৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর হলে গতি আরও কমবে।
এ বিষয়ে কথা হয় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রেলওয়ের সেবা বাড়াতে সরকার আন্তরিক। ইতোমধ্যে নতুন নতুন রোডে রেলসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রেলবহরে যুক্ত হবে বেশ কয়েকটি নতুন ইঞ্জিন। তখন রেলওয়ের সেবার মান আরো বাড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন।