পশু-পাখি পছন্দ করতো ক্ল্যারি কনলিয়ার্স কুঁইয়া (২৫)। বাসায় নানা রকমের পাখি পোষার পাশাপাশি ছিল আদরের কুকুর। পড়ার টেবিলে পড়ে আছে ক্ল্যারির বইগুলো, শুধু নেই ক্ল্যারি। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ক্ল্যারি এখন কেবল শুধুই ছবি।
মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে নগরের ব্যাটারিগলি এলাকায়। নিজ ঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে মহসিন কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র ও নোয়াখালীর বাসিন্দা রবার্ট কুঁইয়ার ছোট ছেলে ক্ল্যারি। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি পার্টটাইম চাকরিও করতেন তিনি। মা, বাবা আর বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাটারিগলি এলাকার নূর মঞ্জিলে থাকতেন ক্ল্যারি। ক্ল্যারির আত্মহত্যায় নির্বাক তার পরিবারের সদস্যরা। কেন ক্ল্যারি আত্মহত্যা করেছে সে বিষয়েও কিছু বলতে পারছেন না তারা। প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে মা লিনা কুঁইয়া যাকে পাচ্ছেন তাকে ধরেই বিলাপ করে কান্না করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ক্ল্যারির ব্যাটারিগলির বাসায় গেলে দেখা যায় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবার ভিড়। সবাই ক্ল্যারির মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সন্তানহারা মায়ের মন যেন মানছে না কোনো সান্ত্বনা। বিলাপ করে কেঁদেই চলেছেন তিনি।
কাঁদতে কাঁদতে লিনা কুঁইয়া বলেন, আমার ছেলে অনেক শান্ত ছিল। কারো সঙ্গে কোনো বিবাদ ছিল না। পড়ালেখার পাশাপাশি একটা পার্টটাইম চাকরিও করত সে। দুপুরে আমার বড় ছেলে আমাকে ফোন করে বলে ক্ল্যারি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। পরে পুলিশকে ফোন দিলে তারা এসে লাশ নামায়, বলতে বলতে আবারো বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন লিনা কুঁইয়া।
আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে কিছু জানেন কি-না, এ প্রশ্নের উত্তরে ক্ল্যারি মা বলেন, একটি মেয়ের সঙ্গে ক্ল্যারির সম্পর্ক আছে। তবে ওই মেয়ের সঙ্গে কিছু হয়েছে কি-না আমি ঠিক জানি না। তবে বাসায় কারো সঙ্গে ক্ল্যারির কোনো সমস্যা ছিল না।
ক্ল্যারির বাসায় আসা মারিয়া ডি সিলভা জয়নিউজকে বলেন, ক্ল্যারির সঙ্গে আমরা একটি সামাজিক সংগঠনে যুক্ত ছিলাম। গত সপ্তাহেও চার্চে আমাদের সংগঠনের সবাই আড্ডা দিলাম, কাজের কথা বললাম। কখনো মনে হয়নি তার মন খারাপ বা অন্যকিছু। সে এভাবে আত্মহত্যা করবে স্বপ্নেও ভাবিনি।
জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার এসআই মো. ছিদ্দিক জয়নিউজকে বলেন, আত্মহত্যার কথা শুনে আমরা ক্ল্যারির ব্যাটারিগলির বাসায় আসি। লাশ ফ্যান থেকে নামানোর পর সুরতহাল করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পর বোঝা যাবে কেন ক্ল্যারি আত্মহত্যা করেছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শীলাব্রত বড়ুয়া জয়নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে ক্ল্যারির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে তার লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে।