বোয়ালখালীতে সমীর দাশ (৩৬) নামের এক পত্রিকা হকারকে ফার্মেসিতে অপারেশন করার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
পরিবারের অভিযোগ, উপজেলার কানুনগোপাড়ার শিমুল মেডিকো নামের একটি ওষুধের দোকানে ৩ এপ্রিল বিকেলে সমীরের কোমড়ের মেরুদণ্ডে অপারেশন করেন এম কে ধর নামের এক চিকিৎসক।
এরপর সমীরের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সর্বশেষ ৭ এপ্রিল দিবাগত রাত পৌনে ১টার সময় নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান সমীর।
সমীর উপজেলার সারোয়াতলী খিতাপচর গ্রামের খগেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। তার ৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
সমীর দাশের বড়ভাই হারাধন দাশ জানান, ২৫ মার্চ কোমরের সামান্য ব্যথা নিয়ে কানুনগোপাড়া শিমুল মেডিকোতে ডা. এমকে ধরের কাছে যান সমীর। এমকে ধর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ এবং এক্স-রে করার পরামর্শ দেন।
পরামর্শ মতো কোমড়ে পুশ করা হয় ইনজেকশন। ইনজেকশন পুশ করার ফলে সেই জায়গ ফুলে যায়। এরপর ২৭ মার্চ এক্স-রে রিপোর্ট নিয়ে গেলে ডাক্তার আবারো নতুন করে আরো একটি চিকিৎসাপত্র দেন। তাতেও কোমরে ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দেওয়ার স্থান ফুলে ওঠে এবং পুঁজ জমে যায়। এতে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৩ এপ্রিল তিনি আবারো ওই চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক কোমরের ফুলে যাওয়া স্থানে অপারেশন করে সেলাই করে দেন। পরদিন ৪ এপ্রিল তিনি পুনরায় ওই স্থানে ড্রেসিং করে নতুন ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন।
এরমধ্যে সমীর দাশকে ৬ এপ্রিল নগরে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. হিরন্ময় দত্তের কাছে নেওয়া হলে তিনি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
এ অবস্থায় নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সমীর দাশকে ৭ এপ্রিল বিকেলে লাইফ সার্পোটে নেওয়া হয় এবং রাত পৌনে ১টার সময় সমীরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কানুনগোপাড়া শিমুল ফার্মেসিতে ডা. এম কে ধর চিকিৎসা প্রদান করেন। তার প্রদত্ত চিকিৎসাপত্রে এমবিবিএস, এমপিএইচ, সি-আলট্রা ডিগ্রির উল্লেখ রয়েছে।
নবজাতক, মা-শিশু, বাত, ব্যাথা ও মেডিসিন রোগে অভিজ্ঞ। এছাড়া জলাতঙ্ক, হেপাটাইটিস, মেনিনজাইটিসসহ বিভিন্ন টিকা দেওয়া ও নাক, কান ব্যথামুক্ত ফোঁড়ানো হয়।
তিনি কমিউনিটি মেডিসিনে স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সাতকানিয়া মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ডা. এমকে ধর নামের কোনো চিকিৎসক তাদের হাসপাতালে কর্মরত নেই।
এ বিষয়ে একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগ নিরূপণ ছাড়াই ফার্মেসিতে রোগীর অপারেশন একজন চিকিৎসক করতে পারেন না। মূলত সমীর দাশ অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন।
এ ব্যাপারে এমকে ধরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সমীর রিকশা থেকে পড়ে কোমরে আঘাত পাওয়ায় ইনফেকশন হয়েছিল। চিকিৎসার ফলে তা প্রায় সেরে গিয়েছিল।
সর্বশেষ সোমবার আসার কথা থাকলেও সমীর আর আসেননি জানিয়ে তিনি বলেন, সমীরের চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি ছিল না। সমীরের পরিবারের প্রায় সবার চিকিৎসা করতেন বলেও জানান তিনি।
ডা. এমকে ধরের পূর্ণ নাম মিঠু কুমার ধর জানিয়ে তিনি জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালের ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে কর্মরত রয়েছেন তিনি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ডা. এমকে ধর নামের কেউ হাসপাতালের কর্মরত নেই।