জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখ এখন বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। এ উৎসবকে বরণ করে নিতে বাঙালির আয়োজনে কোনো কমতি থাকে না। যার যার সাধ্য অনুযায়ী এ দিনটি উদযাপন করেন সবাই।
১৪২৫ বঙ্গাব্দ শেষ হয়ে এ বছর শুরু হবে বাংলা সন ১৪২৬। তবে দুঃখের বিষয়, ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন কিংবা ওইদিন পান্তা-ইলিশ খেলেও অনেকেই জানেন না এ বছর কততম বাংলা সনের আগমন ঘটছে। জানেন না পহেলা বৈশাখ চালুর ইতিহাস।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বত্র ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ব্যবহার ও দৈনন্দিন জীবনে বাংলা সন-তারিখের তেমন ব্যবহার না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমির নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ এপ্রিল অথবা ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ছুটির দিন।
তবে বর্ণিলভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করলেও বাংলা সন কিংবা বাংলা তারিখ বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে উপেক্ষিত। অনেকে জানেই না বর্তমানে কোন বাংলা সন চলছে কিংবা কোন বছর শুরু হতে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বাংলা উপেক্ষিত থাকার কারণেই মূলত এটি ঘটছে। বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলা সন কিংবা তারিখের যেন কোনো মূল্য নেই। স্কুল-কলেজের বাৎসরিক সূচি শুরু হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে। কর্মজীবীরা তাদের বেতন পান ইংরেজি মাসের প্রথম সপ্তাহে। তবে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী এখনো বাংলা সনের প্রথম দিনটিতে হালখাতার আয়োজন করেন এবং পুরনো বছরের লেনদেন মিটিয়ে নতুন করে হিসাব শুরু করেন। এটি ছাড়া বাঙালি জীবনের আর কোথাও বাংলা সনের তেমন কদর নেই। হালখাতার এই ঐতিহ্যটিও বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান জয়নিউজকে বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বাসা বেঁধেছে। আমরা চাইলেও এগুলো পরিহার করতে পারছি না। কারণ আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করছি না। একটু চেষ্টা করলেই আমরা আমাদের জীবনে বাংলা সন এবং তারিখের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করতে পারতাম। কিন্তু আমরা শুধু অন্যদের নকল করে গেছি। নিজেরা কিছু সৃষ্টি করিনি। তাই আজ এ অবস্থা।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাইলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মজীবীদের বেতন বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে দিতে পারি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি বাংলা সনের প্রথম মাস থেকে শুরু করতে পারি। আর সেটা করা গেলে বাংলা সন এবং তারিখ মনে রাখার একটি বিষয় আবশ্যিকভাবে চলে আসতো।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক উম্মে সাবিহা চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, নিত্যদিনের জীবনে বাংলা সন কিংবা তারিখের ব্যবহার তেমন না থাকায় আমরা এসব ভুলতে বসেছি। যদি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলা সন কিংবা তারিখের ব্যবহার থাকতো, তাহলে এসব বিষয়ে সবাই সজাগ থাকতো।