টেকনাফের নাফ নদীতে দীর্ঘ দেড় বছর মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় দেড় হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। জেলে পরিবারগুলোর অভাব-অনটন এখন নিত্যসঙ্গী। অভাব যন্ত্রণা সইতে না পেরে সম্প্রতি এক জেলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যাও করেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ইয়াবাসহ যাবতীয় মাদক চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে নাফ নদীতে স্থানীয় জেলেদের মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তখন হতে নাফ নদী নির্ভর নিবন্ধিত ১ হাজার ১৪১ জন জেলে এবং অনিবন্ধিত আরো প্রায় তিনশতাধিকসহ প্রায় দেড় হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েন।
এতে জেলে পরিবারে চরম অভাব নেমে এলেও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে কৌশলে মাদকের চালান বন্ধ হয়নি। তবে টেকনাফে পুলিশ-বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী কঠোর অভিযানের ফলে এখন মাদক চোরাচালান প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি প্রশাসনের।
এদিকে বেকার হয়ে পড়া জেলেদের রাতে না হলেও দিনের বেলায় বিশেষ ব্যবস্থায় মাছ শিকারের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় জেলেরা। তারা জানান, বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি অথবা ক্ষতিগ্রস্থ জেলে পরিবারে রেশন চালুর দাবিসহ বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করলেও কোনো সাড়া পাননি।
গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ কেজি করে দু’দফায় ৪০ কেজি চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট জেলেরা কোনো ধরণের সহায়তা পাননি বলে জানা গেছে।
টেকনাফ শাহাপরীর দ্বীপ এলাকার জেলে জাফর আলম কালু ও আব্দুল শুক্কুর জয়নিউজকে জানান, ২০ বছর ধরে মৎস্য আহরণ করে সংসার চালাচ্ছেন। মাছ শিকার বন্ধ হওয়ায় শত শত জেলে পরিবারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে।
হ্নীলা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. শফি বলেন, নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। আমরা বাঁচার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। বিশেষ ব্যবস্থায় হলেও জেলেদের নাফ নদীতে মাছ শিকার করার অনুমতি যেন সরকার প্রধান করেন।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছে। মাদকের অপতৎপরতা তুলনামূলক কমলেও সাধারণ জেলেদের ভোগান্তি কমেনি। রমজান উপলক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নাফ নদী নির্ভর জেলেদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, জেলেদের জীবিকার বিষয়টি চিন্তা করে ইতোমধ্যে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।