বাঁশখালী-সাতকানিয়া চূড়ামণি ঢালা সড়ক দিয়ে যেতে চোখে পড়ে ২১টি পাহাড় থেকে স্কেভেটর দিয়ে অবিরত মাটি কাটা হচ্ছে। পাশেই মজুত করা হচ্ছে মাটি। কাটা পাহাড়গুলোর বুকে ২ বর্গকিলোমিটারে স্থাপিত হয়েছে ১৭টি ইটখোলা। পাহাড়ের মাটি দিয়েই তৈরি হচ্ছে ইট।
এসব ইটখোলায় প্রকাশ্যে পুড়ছে বনের কাঠ। বিশাল বিশাল সবুজ পাহাড় ন্যাড়া হয়ে মরুভূমির রূপ নিয়েছে। এসব ইটখোলার অদূরে রয়েছে বাঁশখালীর সাধনপুর বনবিট এবং সাতকানিয়ার চূড়ামণি বনবিট। ইটখোলার ধোঁয়ায় ৫ বর্গকিলোমিটার পাহাড়ে সর্বশেষ যে ক’টি গাছ আছে তাও মরতে বসেছে। সমতল যে ভূমি তাতেও উৎপাদন হচ্ছে না মৌসুমী কোনো ফসল। পাহাড়ের বুকে ফলজ আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিবিধ গাছে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগ।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের চোখের সামনে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে স্থাপিত ইটখোলা উচ্ছেদে নেই কোনো ব্যবস্থা। প্রতিবছর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ইটখোলা মালিকদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই জরিমানা পরিশোধ করে ইটখোলা মালিকরা দ্বিগুণ উৎসাহে পাহাড় কাটে আর বনের কাঠ পোড়াচ্ছে ইটখোলায়।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী বলেন, ইটখোলার লাইসেন্স এবং ছাড়পত্র দেওয়া জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ। এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবুও এসব ইটখোলার প্রভাবে বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতির কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইটখোলায় বনের কাঠ পোড়ালে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, পাহাড়ের বুকে স্থাপিত সকল ইটখোলা অবৈধ। এগুলোর নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, এ ইটখোলাগুলোর কোনোটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ছাড়পত্রবিহীন ইটখোলাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও, মালিকপক্ষ এতে কর্ণপাত করছে না। কিছু ইটখোলা ছাড়পত্র চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদনও করেছে। তবে পরিবেশ দূষণ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস ও বন উজাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করে এগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না বলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
তাছাড়া ইটখোলাগুলোতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে এরা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
অভিযোগ উঠেছে, ইটখোলার মালিকরা গোপন চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইটখোলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাতকানিয়া উপজেলার জামাল ব্রিক ফিল্ডের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন, বাঁশখালীর ইলশার এনবিএর স্বত্বাধিকারী মো. জয়নাল আবেদীন ও চৌধুরী ব্রিক ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী মরতুজা আলী চৌধুরী বলেন, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরে দেড় লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য অনুমোদন নিয়েছি এবং প্রতিবছর ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তাদের ধার্য জরিমানা পরিশোধ করছি।
তবে মালিকপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরে দেড় লাখ টাকা দিয়ে অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এটা একটা গোপন চুক্তি বলে তারা জানান।
জয়নিউজ/আরসি