স্কুলের অফিস সহকারী তিনি। তবে মাঝে মাঝে ক্লাসও নিতেন। অভিযোগ আছে, ক্লাসে ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন তিনি। সম্প্রতি এক ছাত্রীর সঙ্গে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর থেকে এলাকাজুড়ে তার বিচারের দাবি উঠলেও অভিযুক্তের বক্তব্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি তাই হয়- তাহলে তিনি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির সেই ছাত্রীকে অশালীনভাবে জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন? বিস্তারিত জানাচ্ছেন আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি আতোয়ার রহমান মনির
ফেনীর পর এবার লক্ষ্মীপুরের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রায়পুর জনকল্যাণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির এ অভিযোগ ওঠে। অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় উপজেলার সর্বত্র এখন সমালোচনার ঝড় বইছে। অবিলম্বে অভিযুক্ত তাবারক আজাদের দ্রুত অপসারণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
ভুক্তভোগী কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করেন, তাবারক হোসেন আজাদ তাদের স্কুলে অফিস সহকারী হলেও মাঝে মাঝে ক্লাশ নিতেন। ওই শিক্ষক ক্লাসে তাদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি প্রদান করতেন। এ কারণে বিষয়টি চেপে রেখেছিল তারা। দু’দিন আগে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে ধরে যৌন হয়রানি করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলের ১০ জন শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন। অভিযোগে তাবারক আজাদকে অপসারণ ও কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা।
যৌন হয়রানির শিকার অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী জয়নিউজকে জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১৬ এপ্রিল আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার চেয়েছি। এ ঘটনা ও আজাদ স্যারের কুকীর্তি সবাই জানার পরও এখনো পর্যন্ত বিচার পাইনি। এর মধ্যে বিষয়টি যাতে আর কাউকে না জানাই এজন্য আজাদ স্যার তার বাবাকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। তিনি মা মা ডেকে বিষয়টি চেপে যেতে বলেছেন। আর তার ছেলের ক্ষতি হলে দেখে নিবেন বলে শাসিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তাবারক হোসেন আজাদ জয়নিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ওই ছাত্রীর বাবা সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। একথা শুনে ওই ছাত্রীকে স্নেহে জড়িয়ে ধরি। কোনো ধরনের যৌন হয়রানি করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনাবশত দুই বিয়ে করেছি। তবে আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে একটি মহল আমি চার বিয়ে, তিন বিয়ে করেছি বলে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আসলে সবই ষড়যন্ত্র।
জনকল্যাণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, যা শুনেছেন তা সঠিক। ভাইরাল হওয়ায় সবাই এখন এ খবর জেনে গেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১৬ তারিখ শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এরপর তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতে অফিস সহকারী তাবারক হোসেন আজাদকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। ইউএনও স্যার এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।