প্রতি বছর রমজান মাস এলেই বেড়ে যায় পণ্যের দাম। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে কয়েকগুণ। ব্যবসায়ীরা প্রতিবারই সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু রোজা শুরুর আগে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় জ্যামিতিক হারে।
তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রম। এ বছর পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ রয়েছে বাজারে। তাই দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ জয়নিউজকে বলেন, এবার আমাদের কাছে চিনি ও সয়াবিনের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তাই রমজানে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি আমদানি করা হয়েছে। এখানে এস আলম ব্র্যান্ডের চিনি মণ প্রতি ১ হাজার ৭৫৫ টাকায় (৪৭ টাকা কেজি), তীর ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনি ১ হাজার ৭৫০ টাকায় (৪৬ দশমিক ৮৯ টাকা কেজি) এবং ঈগলু ব্র্যান্ডের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৭০ টাকা দরে (৪৭ দশমিক ৪২ টাকা)।
অন্যদিকে কর্ণফুলী ব্র্যান্ডের সয়াবিন মণ প্রতি ১ হাজার ৭৫৫ টাকায় (৭৬ দশমিক ৩৬ টাকা) এবং ফ্রেশ, তীর ও মাল্টি ব্র্যান্ডের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮৬০ টাকায় (৭৬ দশমিক ৬৩ টাকা)।
তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা জয়নিউজকে জানান, এবার রমজান উপলক্ষে ছোলার পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ আছে। অন্যদিকে গত বছরের খেজুরের যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়ে গেছে। নতুন করে আরো খেজুর আমদানিও করা হয়েছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে দামও সহনশীল পর্যায়ে থাকবে।
তিনি আরো জানান, এখন আগের দিন আর নেই। সবকিছুর পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং যে কেউ চাইলেই দাম বাড়াতে পারবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানে দাম বেড়ে যায়। আর দাম কমলে এখানে দাম কমে যায়।
জানা যায়, রমজান উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়া ও মিয়ানমার থেকে আনা ছোলা মানভেদে কেজি প্রতি ৬৩ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সৌদি আরব, দুবাই, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১০ কেজি কার্টনের প্যাকেট ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে। আল জাহেদী খেজুর ৮০০ টাকা, সায়ের খেজুর ১ হাজার টাকা, নাগাল খেজুর ১ হাজার ৩০০ টাকা, জাবাস খেজুর ১ হাজার ৭৮০ টাকা এবং ৫ কেজি কার্টনের কে এস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জয়নিউজকে বলেন, রমজানে জেলা প্রশাসনের পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি দল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারসহ নগরের শপিংমলগুলোতে মনিটরিং করবে। এসব দলে ক্যাব ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও থাকবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এবারের রমজানে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জানান, রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সরকার এবার শক্ত অবস্থানে আছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, রমজানে বেশি লাভ না করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিয়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। অতি মুনাফা করতে দ্রব্যমূল্য বাড়াবেন না। এর জন্য প্রয়োজন হলে আপনারা আমদানি করতে পারেন। এখনো যথেষ্ট সময় আছে।