নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকা এবং মাওবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে বর্ষীয়ান অধ্যাপক ও কবি ভারাভারা রাওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মুম্বাই, দিল্লি, ফরিদাবাদ, রাঁচী ও গোয়ায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আরও চার সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এঁদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে। অরুণ ফেরেরা ও ভার্নন গঞ্জালভেসকে মুম্বvই এবং গৌতম নওলাখাকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাঁচীতে সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামীর বাড়িতে হানা দিয়ে প্রচুর কাগজপত্র, ল্যাপটপ, হার্ডড্রাইভ ও সিডি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। নজিরবিহীন এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন অরুন্ধতী রায়, রামচন্দ্র গুহ-সহ অসংখ্য বিশিষ্ট জন।
দেশজুড়ে এই তল্লাশি অভিযান আর পাইকারি গ্রেফতারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের নামকরা মানবাধিকার কর্মী এবং লেখক-বুদ্ধিজীবীরা।
১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে দলিত বিজয়দিবস অনুষ্ঠানে বড় গন্ডগোল হয়েছিল। পুলিশের দাবি, সেই ঝামেলায় জড়িত ছিলেন ভারাভারারা। তদন্তে নেমে মাওবাদীদের একটি চিঠি পাওয়ার দাবি করে পুলিশ জানায়, তাতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছকের উল্লেখ ছিল। চিঠিতে ভারাভারার নাম রয়েছে।
আজ ভোরে ৭৮ বছর বয়সি ভারাভারার হায়দরাবাদের বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ। দীর্ঘ তল্লাশির পরে গ্রেফতার করে ওই অধ্যাপককে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও প্রচুর কাগজ। তল্লাশি চলে তাঁর মেয়ে, ঘনিষ্ঠ দুই সাংবাদিক ও এক অধ্যাপকের বাড়িতে। গ্রেফতারের পরে সেকেন্দরাবাদে গাঁধী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভারাভারার শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। তার পর তাঁকে পুনে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে হায়দরাবাদ নামপল্লি আদালতে তোলে পুলিশ।
ভারতের পুলিশ মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যে বিশিষ্ট বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ বলছে, নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার এক বামপন্থী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এদের যোগসাজশ পাওয়া গেছে।
তারা বলছে ওই ঘটনার তদন্তের সূত্রে এর আগে কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকেই যেসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছিল, তাঁদের বাড়িতেই আজ তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
সকাল থেকে তল্লাশি শুরু হওয়ার পরে থেকেই মানবাধিকার কর্মীরা ওইসব ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন।
লেখক অরুন্ধতী রায় বলেন, জনসমক্ষে যারা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করছে, তাদের না ধরে উকিল, কবি, লেখক আর মানবাধিকার কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারত কোনদিকে চলেছে। হত্যাকারীদের সম্মানিত করা হবে আর ন্যায়বিচার এবং হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলবেন, তাদের অপরাধী সাজানো হবে। এটা কি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হলো?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ভারতে এসব গ্রেফতারের ঘটনা উদ্বেগজনক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সরকার এই কাজ করছে কি-না সে প্রশ্ন উঠেছে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, ভারতে আইনজীবী, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী এবং মানবাধিকারের রক্ষকদের বিরুদ্ধে এক বিরাট দমন অভিযান শুরু হয়েছে। একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিত মানুষের মত প্রকাশের অধিকার এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা।
খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ টুইটারে এই গ্রেফতার অভিযানের নিন্দা করে বলেছেন, এটি খুবই উদ্বেগজনক। দেশের স্বাধীন কণ্ঠগুলো রুদ্ধ করার এই অভিযান বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের এখনই হস্তক্ষেপ করা উচিত।