দিনের হিসেবে তিনদিন পেরিয়েছে। শেষ হয়েছে জব্বারের বলীখেলার বৈশাখী মেলার সময়। তবে পঞ্চম দিনে এসেও রেশ রয়ে গেছে মেলার। আন্দরকিল্লা থেকে লালদীঘি মাঠ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মেলার বিকিকিনি বন্ধ হয়নি এখনও।
মেলায় সারাদেশ থেকে হাজারো পদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন দোকানিরা। কী ছিল না মেলায়? বাচ্চাদের খেলনা পুতুল থেকে শুরু করে ঘর-সংসারের প্রয়োজনীয় এবং শৌখিন সব উপকরণই বিকিকিনি হয়েছে।
মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে ফুলের ঝাড়ু, শীতলপাটি, প্লাস্টিকের মাদুর, বাঁশবেতের হাতপাখা, মুড়ি-মুড়কি আর নানা পদের মিষ্টান্নের দোকানে।
চাঁদপুর থেকে নানা পদের মিষ্টান্ন সামগ্রী নিয়ে আসা জমির উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, চার বছর যাবত আমি এ মেলায় দোকান দিই। আমার দোকানে বাতাসা, গজা, বুট, চানাচুর, লাড্ডু, খই, তিলের খাজা, পিঠা, আমৃতি, নারকেলের চিড়া, চিড়াভাজা, নাড়ুসহ হরেক রকমের মিষ্টান্ন সামগ্রী আছে। গজা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, চানাচুর ৪০ টাকা, খই ৩০ টাকা, আমৃতি ৪০ টাকা ও নারকেলের চিড়া ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। নারকেলের চিড়া আমার ঘরের বানানো। দোকানে চারজন কর্মচারী রেখেছি।
মেলায় আসা নাসরিন শাহরিয়ার জয়নিউজকে বলেন, আমি প্রতি বছর মেলায় আসি। এ বছরও এসেছি। ঝাড়ু কিনলাম, ঘর সাজানোর জন্য টব কিনলাম। বাচ্চারা মুড়ি-মুড়কি, গজা, বাতাসা, খই, তিলের খাজা এসব গ্রামীণ খাবার খেতে খুব পছন্দ করে। তাই এগুলো একটু বেশি করে নিলাম।
এছাড়াও আছে ফুলের টব, প্লাস্টিকের ফুল, শো-পিস, মৃৎশিল্পীদের বানানো বিভিন্ন মাটির পণ্য, বাসন-কোসন, একতারা, ঢোল, বাঁশি, কৃষি সরঞ্জাম, মাছ ধরার জাল, দা, বটি, ছুরি। খাট, শোকেস, সোফা, চেয়ার-টেবিল, আলনাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের দোকানও ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। এছাড়া ছিল বেশ অল্প দামের কাপড়।
মেলা ঘুরে চার হাত ভর্তি পণ্যসামগ্রী নিয়ে ঘরে ফিরছিলেন নববিবাহিত দম্পতি মিথুন-মুন্নী। জয়নিউজকে তারা বলেন, এরকম মেলা ঘোরার জন্য দারুণ। নতুন সংসার সাজানোর সবকিছুই এ মেলায় বেশ অল্প দামে পাওয়া যায়। সঙ্গে উপরিপাওনা বলীখেলাতো আছেই!
মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী জয়নিউজকে বলেন, জব্বারের বলীখেলার এই মেলা চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারাবাংলার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। দিনের হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনদিনের জন্য হলেও প্রায় সপ্তাহখানেক স্থায়ী হয় দেড় কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই মেলা। এত বড় আয়োজন নির্ভুল এবং শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়াটা আমাদের জন্য গর্বের। এর জন্য আমি সারা চট্টগ্রামের মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।