নাম তার অনিল বড়ুয়া। ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করতেন হাটহাজারী পৌরসভার এক নম্বর সড়ক আদর্শ গ্রামের উত্তর পাহাড়ে। আট বছর আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কথিত আছে তিনি জীবদ্দশায় ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের নাম রেখেছিলেন ইবরাহীম চিশতী। মৃত্যুর পর এলাকাবাসী স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করতে না দেওয়ায় তাকে দাফন করা হয়েছিল তার নিজ শয়নকক্ষে। কিছুদিন পর তার কবর ‘বাবার আস্তানা’নামে পরিচিতি লাভ করে।
গত ছয় বছর ধরে চলছে ওই বাবার বাৎসরিক ওরশ মাহফিল। এছাড়া ওই বাবার আস্তানাকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান পালিত হত ঘরোয়াভাবে। সারারাত নাচ-গানে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ত আশপাশের শত শত পরিবারের লোকজন। দীর্ঘ আট বছর ধরে এলাকাবাসী বাবার আস্তানার এসব অপকর্ম সহ্য করে আসছিল।
এর ধারাবাহিকতায় হয়রত শাহ মুনছুরিয়া দায়রাপাকের ব্যবস্থাপনায় আগামী ৩ মে ওরশ উদযাপনের লক্ষ্যে চলছিল জোর প্রস্তুতি। এলাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও রশিদ বই নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমীনকে জানান।
অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান রুহুল আমীন। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাবাসীর অভিযোগ শোনেন। এরপর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ওই ভন্ড বাবার আস্তানা গুঁড়িয়ে দেন। এসময় এলাকার শত শত উৎসুক জনতাকে ঘটনাস্থলে জড়ো হতে দেখা যায়।
সেখানে উপস্থিত স্থানীয় এলাকাবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাটহাজারী বাসস্টেশনের অদুদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও এলাকার বিতর্কিত ব্যক্তি আবদুল ওহাব আল কাদেরী নামে এক ব্যক্তি এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইন্ধনদাতা। তার বিরুদ্ধে আরো নানারকম বিতর্কিত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুল ওহাব আল কাদেরী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, এটি কোনো মাজার না। তিনি কোনো পীরও না। তবে মনছুরাবাদ পীরের মুরিদ ছিলেন। তাই তার কবরকে দায়রা পাক হিসেবে তৈরি করে আমি তার দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। এ ওরশের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।
ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনও রুহুল আমীন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ওই এলাকায় অনিল বড়ুয়া নামে এক লোকের মৃত্যুর পর মাজার বানানোর পরিকল্পনা করে তার পরিবারের সদস্যসহ কিছু অসাধু ব্যক্তি। এসব ভণ্ডদের ভণ্ডামীর কারণে প্রকৃত অলি-আউলিয়াদের বদনাম রটতে পারে। তাই অভিযান চালিয়ে ‘বাবার আস্তানা’ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।